ভেষজ পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়সমুহ

গ্যাস্ট্রিক শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। সাধারণত পেটের সমস্যা জনিত কারন বুঝাতে মানুষ এই শব্দটি ব্যাবহার করে থাকে। এই পোস্টটিতে আমরা কোন ধরণের খাবার গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা করে তা সম্পর্কে জানবো। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থেকে ভেষজ উপায়ে মুক্তি পাওয়া যায় তা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।


এই পোস্টটি পড়ার পর আশা করছি আপনি উপকৃত হবেন। আমার এই পোস্টটিতে আমি গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার কারণ ও এর সমাধানের উপায় এবং ভেষজ পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

ভূমিকা

পরিপাকতন্ত্র আমাদের মানব শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ। আমদের শরীরের এই অঙ্গটিও বিভিন্ন কারনে সমস্যাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। জনগনকে এই বিষয়ে সচেতন করার জন্য ওয়ার্ল্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অর্গানাইজেশন ২৯ মে কে ‘বিশ্ব ডাইজেস্টিভ স্বাস্থ্য দিবস’ বা ‘বিশ্ব পরিপাক স্বাস্থ্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০০৪ সাল থেকে এই দিবসটি পুরো বিশ্বে পালন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের এর আছে। মূলত খাবারের বদহজম হওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকে।

গ্যাস্ট্রিক কী?

মূলত খাবারের বদহজমের কারণে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি দেখা দেয়। যেসকল সমস্যাগুলি আমাদের পাকস্থলি ও পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে তাদেরকে একত্রে গ্যাস্ট্রিকের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাবিত করে। এবং একটা সময় এই সামান্য সমস্যাটিও গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে উঠে। তাই আমাদের সকলেরই এই সমস্যার কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার মূল কারনসমূহ

আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অনিয়মের কারনেই গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি হয়ে থাকে। আমরা প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকি কিন্তু এসব ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার গুলোই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। সময়মতো খাবার না খাওয়া, পরিমিত পানি পান না করা, মানসিক চাপ, বাইরের ভাজা-পোড়া খাবার বেশি খাওয়া এসব কারনেই গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়। আমরা যখন খাবার খাই তখন খাবারের সাথে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন প্রবেশ করে।

পরবর্তিতে আমাদের পাকস্থলিতে খাবার হজম হওয়ার সময় হাইড্রোজেন, মিথেন বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হয়ে পেটে জমা হয়। আর এজন্যই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে আমরা যদি উচ্চ ফাইবার যুক্ত বা আঁশযুক্ত শাক-সবজি খাই বা চর্বিযুক্ত খাবার খাই তাহলেও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ কি কি

গ্যাস্ট্রিক এর কতকগুলো সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় প্রথম অবস্থায় যেসকল লক্ষণ গুলো রোগীর দেখে প্রকাশ পায় সেগুলো হলো-
  • পাকস্থলি স্ফীত হওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • অম্বল
  • পেটের অস্বস্তি
  • পেটে ব্যাথা অনুভুত হওয়া
এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরণের শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি প্রায় সবার এ হয়ে থাকে। শুধুমাত্র সঠিক পরামর্শের অভাবে এই ছোট সমস্যাটি বড় আকার ধারন করে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত সঠিক নিয়ম মেনে খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে 'ওমিপ্রাজল' ট্যাবলেট টি প্রতিদিন একবার খালি পেটে সেবন করতে পারেন। প্রতিদিন একটি করে ডোজ নেওয়ার পরেও যদি আপনার সমস্যাটি না কমে তাহলে আপনি প্রতিদিন দুইটি করে ডোজও নিতে পারেন। তবে আপনার সমস্যাটি যদি বেশি অনুভুত হয় তাহলে অতিসত্তর নিকটস্থ ডাক্তার এর কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করুন ও তার পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।

ভেষজ পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পানিঃপানির অপর নাম জীবন। প্রতিদিন পরিমাণ মতো ও সময়মতো পানি পান করার মাধ্যমেও আমরা আমাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি। একটা প্রবাদ বাক্য আছে "খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল দুটোই স্বাস্থের জন্য উপকারী"। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পরে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস টি আপনার গ্যাস্ট্রিক দূর করে দিবে। পানি আমাদের হজমশক্তিকে বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা।

আদাঃ গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য আদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আদা তে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান গ্যাস্ট্রিক এর জ্বালা-পোড়া জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

দইঃ গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটি আমাদের পাকস্থলিতে খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে বেশি হয়ে থাকে। দই এমন একটা জিনিস যেটাতে এমন কতকগুলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের খাবার দ্রুত হজম হতে সাহায্য করে। তাই ভারী কোনো খাবার খাওয়ার পর পরিমানমতো দই খেয়ে নিতে হবে। এতে করে আমাদের পাকস্থলির খাবার দ্রুত হজম হয়ে যাবে।

পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতা আমাদের শরীরে হজম কার্যে ব্যাবহৃত এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতায় রয়েছে শক্তিশালি জীবাণুনাশক ক্ষমতা। যার ফলে এটি পাকস্থলি ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ফলে পেটের গোলমাল কম হয়। তাই গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার প্রতিকারে এটি অনেক উপকারে আসে।

ডাবঃ গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা নিরাময়ে ডাবের পানি অনেকটাই সাহায্য করে। ডাবের পানিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ডাবের পানি আমাদের শরীর ও পাকস্থলি ঠান্ডা রাখতে সাহাযয় করে।

লেখকের মন্তব্য

গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যাটি প্রথম অবস্থায় অল্প ক্ষতি করলেও ধীরে ধীরে এটি মারাত্নক আকার ধারন করে। তাই আমাদের এই বিষয়টা নিয়ে বেশী সচেতন হতে হবে। আমার এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার পরিবার ও আত্বিয়-স্বজনদের কাছে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url