হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি

হার্ট অ্যাটাকের কারনে মারা গেছেন এরকম খবর প্রায় সময়ই শুনে থাকি। প্রিয় পাঠক, অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি তা সম্পর্কে জানা নেই? এই আর্টিকেলটিতে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য এই আমি আর্টিকেলটিতে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।

ভূমিকা

অপরিকল্পিত জীবনযাপন করার কারনে আমরা প্রায় সবাই ই বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভূগী। জ্বর, সর্দি, কাশি এসকল রোগ বর্তমানে আমাদের নিত্যদিনের সমস্যা। আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভূগী। ছোটো খাটো অসুস্থতা একটা লং টাইম ধরে থাকার কারনে এই ছোটো খাটো সমস্যাটিই বড় আকার ধারন করে। আমার আজকের আর্টিকেলটি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি তা সম্পর্কে। এখানে হার্ট অ্যাটাকের কারণ সমূহের পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা হয়েছে।

হার্ট অ্যাটাক কি

আমাদের মানব শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ হলো আমাদের হৃদপিন্ড। এটি আমাদের শরীরের প্রতয়েকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের হৃদপিন্ডের উপরিভাগে থাকা করোনারি আর্টারি বা ধমনি দ্বারা আসা রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি ও অক্সিজেন পায় আমাদের হৃদপিন্ড। যেকোনো কারণে যদি আমাদের হৃদপিন্ডের এই ধমনি দিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের হৃদপিন্ড তার পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টি উপাদান পাবে না ঠিক সেই মুহুর্তেই আমাদের হৃদপিন্ড অকেজো হয়ে পড়বে। আর আমাদের হৃদপিন্ড অকেজো হয়ে যাওয়াটাকেই হার্ট অ্যাটাক বা মেডিকেলের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলে।

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি

হার্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারন ভাষায় আমাদের হৃদপিন্ডে যেসব রক্তনালী বা ধমনী গুলো প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে থেকে কোন একটি নালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের হৃদপিণ্ড ও অকেজো হয়ে পড়ে। মূলত এসব রক্তনালী দিয়ে রক্ত আমাদের হৃদপিন্ডে পৌছাতে না পারার কারনে যে অংশে রক্ত পৌছায় না সে অংশটুকু অকেজো হয়ে যায়। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার কারনে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।


মূলত আমাদের খাদ্যাভ্যাস বা আমাদের জীবনযাপন করার ভুল নিয়মের কারনে আমরা বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতায় ভূগী। হার্ট অ্যাটাকের কারণ কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে গেলে নিম্নের কারন গুলোই বেশী দায়ী হার্ট অ্যাটাকের জন্য। কারন গুলো হলো-
  • অস্বাস্থকর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
  • রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেশী থাকা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ডায়বেটিকস
  • নিয়মিত কায়িক শ্রম না করা
  • ধুমপান করা
এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারনে আমাদের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যেমন, মাদকের অপব্যাবহার ও রক্তে অক্সিজেন এর অভাবের কারনে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। বর্তমানে তরুন প্রজন্মের আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে এই মাদকের অপব্যাবহারের হাত রয়েছে। আবার কোনো কারনে আমাদের রক্তে অক্সিজেন এর মাত্রা কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বেড়ে যায়।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মানুষদের মৃত্যুর অন্যতম কারন হলো হার্ট অ্যাটাক। প্রতিবছর প্রায় ১.৮০ কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকের কারনে মারা যায়। অসুস্থতার তারতম্যের কারনে একেকজনের লক্ষণ একেক রকমের হয়ে থাকে। আবার নারী-পুরুষেরও আলাদা আলাদা লক্ষণ দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশী যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো-
  • অস্বস্তি বোধ হওয়া
  • বুকে ব্যাথা অনুভুত হওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া
  • ঘাড়ে, পিঠে ব্যাথা অনুভুত হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • মাথা ব্যাথা বা মাথা ঘোরা
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
  • গলা শুকিয়ে যাওয়া

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য

অনেকেই আছে যারা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোককে একই মনে করেন। কিন্তু এই দুটি বিষয় আলাদা। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক দুটি আলাদা বিষয় হলেও এই সমস্যা দুইটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় একই। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যেকার প্রথম পার্থক্য হলো হার্ট অ্যাটাক আমাদের হৃদপিন্ডে হয় আর স্ট্রোক হয় আমাদের মস্তিষ্কে। হার্টের রক্তনালি বন্ধ হওয়ার ফলে আমাদের হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।

অন্যদিকে আমাদের মস্তিষ্কে যেসব রক্তনালী দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়। আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশে স্ট্রোক হয় সেই অংশটুকু দিয়ে আমাদের শরীরের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পরিচালিত হতো সেগুলো প্যারালাইসিস বা অবশ হয়ে যায়। অতি সাধারণভাবে বলতে গেলে হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে হার্ট এটাক হয় এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়।

হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী থাকে বা যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিকস থাকে তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি এড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হলো একটি স্বাস্থকর জীবনযাপন করা। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে গেলে নিম্নলিখিত নিয়ম-কানুন গুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন-

সুষম ডায়েট মেনে চলাঃ অনিয়ন্ত্রিত বা অপরিকল্পিত ডায়েট এর কারনে আমাদের শরীরের ধমনী গুলো বা শিরাগুলোতে ক্রমশ চর্বি জমতে থাকে। এক পর্যায়ে গিয়ে ধমনীগুলো বা শিরাগুলো সরু হতে থাকে। যার ফলে ধমনী বা শিরার মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া একটি সুপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ধুমপান ত্যাগ করাঃ হার্ট অ্যাটাকের কারন হিসেবে ধুমপান এর অভ্যাস দায়ী। ধুমপান এর ফলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। ধুমপান করার ফলে আমাদের শরীরের রক্তনালী গুলোকে সরু এবং রক্ত জমাট বেধে যায়। তাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি এড়াতে ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। ধুমপান ত্যাগ করার জন্য আপনার নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ সুস্থ সবল জীবনযাপন করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার জুড়ি নেই। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কম শ্রমসাধ্য ব্যায়াম যেমন, হাটা-হাটি করা, সাতার করা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি কাজগুলো করার মাধ্যমেও আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ-সবল তথা হার্ট অ্যাটাক এর ঝুকি কমাতে পারি।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখাঃ উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বাড়ায়। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমরা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবণ খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিনের খাবারে পরিমাণ মতো লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখাঃ আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজনের ফলেও হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। নিমমিত ব্যায়াম করা ও অতিরিক্ত ফ্যাট যুক্ত খাবার পরিহার করার মাধ্যমেও আমরা আমাদের শরীরের ওজঙ্কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি। ফলশ্রুতিতে আমরা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতে পারি।

পরিশেষে

সুস্থ ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত খাবার তালিকা ও অল্প সামান্য কায়িক শ্রম। কারন হার্ট অ্যাটাক এর সমস্যাটি বর্তমানে আমাদের সমাজে একটি বিরুপ প্রভাব ফেলে। উপোরোক্ত নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি অনেকাংশে কমাতে পারি।

প্রিয় পাঠক আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার কাছের মানুষদের কাছে শেয়ার করে তাদেরকেও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারন কি কি, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতন করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url