রেশম চাষ পদ্ধতি- রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি

অনেকেই আছে যারা রেশম চাষ পদ্ধতি- রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। এই আর্টিকেলটিতে রেশম চাষ পদ্ধতি- রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। রেশম চাষ পদ্ধতি- রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি , রেশম চাষ কি, রেশম চাষ পদ্ধতি কোথায় আবিষ্কৃত হয়, বাংলাদেশের কোন জেলায় রেশম চাষ হয়, রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

রেশম চাষ কাকে বলে

রেশম সুতা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে রেশম পোকা প্রতিপালন করাকে রেশন চাষ বলে। ইংরেজীতে একে Sericulture বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হলো- Culture of Science. যার অর্থ সেরিসিন নামক এক ধরনের প্রোটিনের লালন। বর্তমানে রেশম থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করে থাকি। মূলত সুতা তৈরির উদ্দেশ্যে রেশম পোকা প্রতিপালন করাকেই রেশম চাষ বলা হয়।

রেশম চাষ পদ্ধতি কোথায় আবিষ্কৃত হয়

রেশম শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। চীনে সর্বপ্রথম রেশম চাষ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। খ্রিস্টপূর্ব 2000 বছর আগে রেশম চাষ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। চিনে রেশম চাষ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত এরা গোপনীয় ভাবে রেশমি সুতা ও রেশমি কাপড় তৈরি করতে থাকে। ৫০০ খ্রিস্টাব্দের পর দুজন ইউরোপীয় পাদ্রি চুরি করে নেয় এবং রেশমি সুতা উৎপাদন পদ্ধতি রপ্ত করে নেয়।

এরই সাথে তারা রেশম উৎপাদনের জন্য রেশম পোকার ডিম ও তুত গাছের বীজ সংগ্রহ করে রেশম চাষ শুরু করে দেয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই এই রেশম পোকার চাষের মাধ্যমে রেশমি সুতা থেকে রেশমি কাপড় তৈরি করে থাকে।

বাংলাদেশের কোন জেলায় রেশম চাষ হয়

প্রাচীন শিল্প গুলোর মধ্যে রেশম শিল্প বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি শিল্প। দেশ বিভক্ত হওয়ার আগে থেকেই এদেশে রেশম চাষ হতো। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা রেশম চাষের জন্য সবচেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার প্রায় সব অঞ্চলেই রেশম চাষ করা হয়। তবে বর্তমানের রংপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে রেশম চাষ শুরু করা হয়েছে। রংপুর অঞ্চলে প্রতিবছরে প্রায় ৫ টন রেশম সুতা উৎপাদন করা হচ্ছে।

তাছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রেশম উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে রেশম শিল্পে আরো ব্যাপক উন্নতি দেখতে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের শিল্প খাতে রেশম শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে এটি প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় সাহায্য করে।

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

রেশম চাষের মাধ্যমে রেশম চাষিরা প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে থাকে। অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করার মাধ্যমে চাষীরা এই রেশম চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। রেশমের গুটি তৈরি করার জন্য মাত্র এক থেকে চার হাজার টাকায় যথেষ্ট। আবার 8 থেকে 10 হাজার টাকার মাধ্যমে আপনি রেশমের সুতা তৈরি করতে পারবেন। তারপর এর সাথে আরো পাঁচ থেকে 10 হাজার টাকা বেশি বিনিয়োগ করলে আপনি রেশমের গুটি তৈরি করা থেকে সুতা তৈরি এবং সেই সুতা দিয়ে পোশাক তৈরি করে বাজারজাত করতে পারবেন।


আশা করছি বুঝতে পারছেন যে খুবই সামান্য উজি দিয়েও এই রেশমের চাষ শুরু করা যেতে পারে। রেশমের গুটি থেকে যে রেশমি সুতা পাওয়া যায় তা থেকে যেসব পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করা হয় তা বেশ আরামদায়ক হয়। এজন্য এটি ছোট বড় নারী পুরুষ সকল বয়সের মানুষের কাছে বেশ পছন্দের হয়। রেশমি সুতা থেকে যে সব বস্ত্র তৈরি করা হয় তার চাহিদা অনেক রয়েছে। তাই এই রেশম চাষের ক্ষেত্রে লাভের অংশটাই বেশি হয়ে থাকে।

রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি

অল্প পুঁজি ব্যবহার করে একটি ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জনের জন্য রেশম চাষ করার জুড়ি নেই। রেশম চাষ করার আগে অবশ্যই আপনাকে রেশন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। তা না হলে আপনি পরবর্তীতে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। রেশম চাষ করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে।

তুত পাতা সংগ্রহ করা

রেশম পোকার প্রধান খাদ্য হলো তুত গাছের পাতা। তাই রেশম চাষের জন্য তুত গাছের পাতা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনি চাইলে বাহির থেকে আমদানি করতে পারেন। আবার যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি থেকে থাকে তাহলে আপনি নিজেই আপনার জমিতে তুত গাছ লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার বাহির থেকে তুত গাছের পাতা আমদানি খরচ বেঁচে যাবে।

রেশমের লার্ভা সংগ্রহ করা ও প্রতিপালন

রেশম চাষ করার জন্য আপনার রেশমের লার্ভা প্রয়োজন পড়বে। রেশমের লার্ভা সংগ্রহ করার পর আপনাকে সেগুলো পালন করতে হবে। রেশম পালনের জন্য আপনাকে অবশ্যই রেশমের পোকার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাছাড়া আপনি সুস্থ সবল রেশন পোকা পালন করতে পারবেন না। যেসব পোকা প্রতিপালনের পূর্বেই আপনাকে এটি নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি যে স্থানটিতে সম্পর্কে প্রতিপালন করতে চাচ্ছেন তা রেশম প্রকার জন্য অনুকূল পরিবেশ হবে কি না।

বাসস্থান জীবাণুমুক্ত করা

আপনি যে স্থানটিতে রেশম পোকা পালন করবেন বলে ঠিক করেছেন সেই স্থানটি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। আর এজন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের জীবানুন নাশক স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। অন্যান্য সকল জীবন নাশক স্প্রে করার পরে আপনি ফরমালিন যুক্ত পানি দিয়ে পুরো স্প্রে করে ২৪ ঘন্টার জন্য ঘরটির দরজা জানালা বন্ধ করে রাখবেন। এতে করে সকল প্রকার জীবাণু যার দ্বারা রেশম পোকার লার্ভা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলো মরে যাবে।

ডিম ফোটানো ও পুত্তলি

ভালো মানের ডিম সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট এ ৮০ শতাংশ আদ্রদায় রেখে দিতে হবে। ডিম থেকে লার্ভা বের হওয়ার ২০ থেকে ২৫ দিনে থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তুত গাছের পাতা দিতে হবে। একটি লার্ভা চারবার তার স্থান পরিবর্তন করার পর পঞ্চম বার তারা পুত্তলি তৈরি করে।

গুটি সংগ্রহ

রেশম পোকার লার্ভা গুলো নিয়মিত তুত গাছের পাতা খাওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে একটি সময় পর এটি গুটি আকারে ধারণ করে। একটি গুটি পরিপূর্ণতা লাভ করার পর গুটির ভেতরে থাকার সভ্যকাটি মরে যায়। ভেতরের রেশম পোকাটি মরে গিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পরে রেশম গুটিটি সংগ্রহ করে নিতে হবে। তারপর এই রেশম গুটি বাজারে বিক্রি করার মাধ্যমে রেশম চাষ পদ্ধতি শেষ হয়।

মন্তব্য

রেশম চাষ বর্তমান সময়ের একটি লাভজনক ব্যাবসা। অল্প পুজি ব্যাবহার করে ব্যাবসা শুরু করার জন্য এটিই একমাত্র লাভজনক ব্যাবসা। প্রিয় পাঠক আশা করছি উক্ত আর্টিকেলটি পড়ে আপনি রেশম চাষ পদ্ধতি- রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। পাশাপাশি রেশম চাষ কাকে বলে, রেশম চাষ পদ্ধতি কোথায় আবিষ্কৃত হয়, বাংলাদেশের কোন জেলায় রেশম চাষ হয়, রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কেও একটি সম্মুখ ধারণা পেয়েছেন।

আমার এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে এই পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আর আমি প্রতিনিয়ত এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পোস্ট করে থাকি তাই আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url