শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আমাদের ত্বকের কিছু অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন। প্রিয় পাঠক, শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানা নেই। আমি এই আর্টিকেলটিতে শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। আমার এই পোস্টটি পড়লে আপনি শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আমার এই পোস্টটিতে আমি শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়, শীতে ত্বকের সমস্যাসমূহ, শীতে ত্বকের কী কী রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়, শীতকালে রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
শীতে ত্বকের সমস্যাসমূহ
আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবানু প্রবেশ করে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তুলে। শীতের মধ্যে আমাদের শরীরের ত্বক অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই এ সময় খুব সহজেই বিভিন্ন রোগ জীবানু প্রবেশ করে ফেলে। শীতের সময় বেশীরভাগ মানুষেরই শ্বাস্কষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সাথে আমাদের ত্বকেরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আর এসব রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাময় পাওয়ার জন্য এসব রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান থাকা জরুরি।
যেহেতু শীতকালে পরিবেশে আর্দ্রতা ও জলীয় বাষ্পের পরিমান কম থাকে তাই আমাদের ত্বকের প্রধান যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া। এছাড়াও শীতে ত্বকের সমস্যাসমূহ গুলো হলো-
- ত্বক শুষ্ক ও খষখষে হয়ে যাওয়া
- একজিমা
- সোরিয়াসিস
- অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
- কেরাটোসিস পিলারিস
- চুলকানি(শুষ্ক ত্বকের কারণে)
- ঠোট ও পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়া
- হাতের চামড়া উঠা
- খুশকি হওয়া
এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস আছে বা যাদের জন্মগত চামড়ার সমস্যা আছে তাদের সেইসকল সমস্যা গুল শিতকালে বেড়ে যায়। তীব্র শীতের কারণে অনেকের হাত ও পায়ের আঙ্গুল ফুলে যায়। হাত ও পায়ের আঙ্গুল ফুলে যাওয়ার সমস্যাকে রেনড ফেনোমেনং বলে।
শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে ত্বকের যত্নে আমাদের একটু বেশী সজাগ হওয়া দরকার। কারণ আবহাওয়াজনিত কারনে শীতকালে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশী রোগ জীবানুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগ ছড়ানো জীবানু ছাড়াও এমনিত্ব বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। তবে সঠিক সময়ে সঠিক যত্ন নেওয়া হলে আমরা এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
শীতকালীন এসকল সমস্যার সমাধান হিসেবে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারি। বর্তমানে বাজারে শীতে আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রীম বা লোশন পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলো ব্যাবহারের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত উপাদান ব্যাবহার করা। শুধু শীতকালেই নয় বছরের অন্যানয় সময়েও আয়ুর্বেদিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত উপাদান ব্যাবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়া।
ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। শীতকালে অল্প কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই আমরা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত করে রাখতে পারবো। ত্বকের যত্নে কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
শসাঃ যাদের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব আছে তারা শীতে ত্বকের এক্সট্রা যত্নের জন্য শসার রস ব্যাবহার করতে পারেন। মুলতানি মাটি, শসার রস ও চন্দনের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্টটি মুখে, হাত ও পায়ের ত্বকে লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার ১০ মিনিট পরে সাধারন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনি আপনার ত্বকের তৈলাক্ততা দূর হয়ে উজ্জ্বলতা ফিরে আসার পরিবর্তনটা নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
পেপেঃ ত্বকের পোড়া ভাব দূর করার জন্য পাকা পেপে কার্যকরী ভুমিকা রাখে। পাকা পেঁপে সংগ্রহ করে দুই টেবিল চামচ পাকা পেঁপের পেস্ট বানিয়ে পেস্টটা মুখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দিনে দুইবার করে এক সপ্তাহ ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়।
কলা মধু ও টমেটোঃ শীতকালে ত্বকের যত্নে কলা মধু ও টমেটো দারুন কাজ করে। তাই শীতকালে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। কলা পেস্ট বানিয়ে তাতে সামান্য মধু দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকের উচ্চতা বাড়বে। এই একই নিয়মে টমেটোর পেস্ট বানিয়ে তার সাথে কিছু মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালেও ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
গাজরঃ শীতকালে আমাদের ত্বক অনেকটা আদ্রতা হারানোর পাশাপাশি এর কোমলতাও হ্রাস পায়। ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে গাজর অনেকটা সাহায্য করে। গাজর ব্যবহার করে ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনার নিয়মটাও অনেক সহজ। কচি গাজরের চন্দনের ব্যবহার করে পেস্ট বানিয়ে মিশ্রণটি ১০ মিনিট তকে লাগিয়ে রাখার পর হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বকের কোমলতা পুনরায় ফিরে আসবে।
নারকেল তেলঃ শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে নারিকেলের তেল দারুন কাজ করে। নারিকেল তেল ব্যবহার করে উজ্জলতা ফিরিয়ে আনার জন্য মুখে টোকা করে নারকেলের তেল লাগিয়ে কুসুম গরম পানিতে একটি সুতির রুমাল ভিজিয়ে সেটাকে নিংড়ে নিয়ে রুমালটি 10 মিনিটের জন্য এর উপর রেখে দিন। দশ মিনিট পর মুখটা ধুয়ে গোলাপ জল লাগিয়ে নিন; এতে করে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা পুনরায় ফিরে আসবে। তবে যাদের ত্বকে তৈলাক্ত তা ভাব একটু বেশি তারা এই পদ্ধতিটি অবলম্বন না করাই উচিত। তা না হলে উনার মুখের তৈলাক্ততা ভাব বৃদ্ধি পেতে পারে।
দুধের ক্রীম ও টকদইঃ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দুধ ও টক দই এই দুটোই বেশ কার্যকরী। সব ধরনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত। দুধের ক্রিম বা টক দইয়ের সাথে উপায় এক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে নিন। মিশ্রনটি ব্যবহারের আগে পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়
শীতকালে শিশুর ত্বকের বিশেষ এক্সযত্নের প্রয়োজন পড়ে। কারন প্রাপ্ত বয়ষ্কদের তুলনায় শিশুদের ত্বক বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যার ফলে প্রাপ্ত বয়ষ্কদের তুলনায় শিশুদের ত্বকের আর্দতা অতি দ্রুত হারিয়ে যায়। যার ফলে শিশুদের ত্বক খুব তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই এদের ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
তেল মালিশ করাঃ শিশুদের ত্বক প্রাপ্তবয়ষ্কদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাই শিশুদের ত্বক অতি দ্রুত আর্দতা হারিয়ে ফেলে। শিশুদের সংবেদনশিল ত্বকের আর্দতা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত তেল মালিশ করা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।ত্বকের আর্দতা ধরে রাখার পাশাপাশি তেল মালিশ করার ফলে শিশুর দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শিশুর ত্বককে সুস্থ রাখে। শিশুর কোমল ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বেবী অয়েল দিয়ে মালিশ করা খুবই উপকারী।
গোসলের ক্ষেত্রেঃ সঠিক নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত গোসল করানোও শিশুর ত্বকের যত্নের একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ। কারণ নিয়মিত গোসল করানোর মাধ্যমেও শিশুর ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া সম্ভব। শীতকালে উষ্ণ পানিতে শিশুকে বেশিক্ষন ধরে গোসল করানো একদমই উচিত নয়। কারন গরম পানিতে বেশিক্ষন ধরে গোসল করানোর ফলে শিশুর কোমল ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে গরম পানিতে বেশিক্ষন ধরে গোসল না করিয়ে ঝটপট সেরে ফেলাই ভালো।
সঠিক ক্রীম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করাঃ শিশুদের ত্বক অত্যান্ত কোমল ও সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাই এদের ত্বকে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি ছড়ানো জীবানুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগ জীবানুর আক্রমনের পাশাপাশি ভুল ক্রীম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করার ফলেও শিশুদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। শীতকালে শিশুদের ত্বকের আর্দতা ধরে রাখার জন্য আমরা যেসব ক্রীম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করে থাকি তা সম্পর্কে ব্যাবহারের পূর্বেই ভালোভাবে দেখে নেওয়াটা অনেক জরুরি।
ঠোট ফাটা প্রতিরোধঃ শীতকালে সবারই ঠোট ফেটে যাওয়াটা একটি খুবই সাধারন ব্যাপার। শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই। শীতে শিশুদের ঠোট ফেটে যাওয়াটাও খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কারন একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের তুলনায় শিশুর ঠোট বেশী কোমল হয়ে থাকে। তাই শিশুদের ঠোট অনেক তাড়াতাড়ি আর্দতা হারিয়ে ফেলে। শিশুর শুষ্ক ঠোটকে পুনরায় কোমল করে তুলতে বাচ্চার ঠোটে পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লোশন ব্যাবহার করতে পারেন।
শিশুর ডায়পারের দিকে বিশেষ নজর রাখাঃ শীতকালে শিশুর ডায়পার জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিবার ডায়পার পরিবর্তন করার সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করতে হবে। শিশুর জন্য ঠিক কোন ডায়পার বা কোন ময়েশ্চারাইজারটি সঠিক হবে তা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। শীতকালে শিশুর ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এড়াতে শিশুর ভেজা ডায়পার ঘন ঘন পরিবর্তন করে দিতে হবে।
শীতকালে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকের যত্ন
সারাদিনের কর্মব্যাস্ততার পর বাড়ি ফেরার পর আমাদের ত্বকে যে একটা মলিনতার ছাপ পড়ে যায় তা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি। তাই শরীর ও আমাদের ত্বককে ফ্রেস করার জন্য এর প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। তবে শীতকালে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমাদের ত্বকের প্রয়োজন বিশেষ কিছু যত্ন। শীতকালে ত্বকের যত্নে আমরা নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারি। পদ্ধতিগুলো হলো-
- ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
- প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ উপাদানযুক্ত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন
- বালিশের কভার পালটে নেওয়া
- ঘরের আলো কমিয়ে রাখুন
- চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ঘুমানোর আগে কুরানো শশা বা ঠান্ডা আলু
- হাত ও পায়ে লোশন ব্যাবহার করা
- বড় চুল হলে ঘুমানোর আগে বেনি করা
- প্রতি রাতে ঠোটে ভ্যাসলিনের ব্যাবহার করা
পরামর্শ
শীতকালে আমাদের ত্বকের যত্নে একটু বেশী সজাগ থাকা উচিত। কারণ এই সময়টাতে আমাদের ত্বক্ব বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। আমি আমার এই পোস্টটিতে শীতকালে ত্বকের যত্নে যা যা করা লাগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার পোস্টটির দ্বারা আপনি উপকৃত হয়েছেন আশা করছি। পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার পরিচিত ব্যাক্তিদের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url