শীতের দিনে কোন তাপমাত্রায় পানি দিয়ে গোসল করা উচিত

শীতের দিনে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে আমাদের শরীরে কি ঘটে বা শীতের দিনে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা ভালো হবে কিনা গরম পানিতে গোসল করা ভালো হবে এই কথাটা আমাদের সবার মনেই আসে। এই পোস্টটিতে শীতের দিনে কোন তাপমাত্রায় পানি দিয়ে গোসল করা উচিত তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তাই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ঠান্ডা পানিতে গোসল উপকার কি কি

সুখের হরমোন রিলিজঃ ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে আমাদের ব্রেনে Endorphins (এন্ডোরফিন) নামক এক ধরনের হরমোন রিলিজ হয়। এই Endorphins নামক হরমোনকে অনেক সময় সুখের হরমোন বলা হয় এর কারণ হলো এই হরমোনটি যখন আমাদের ব্রেনের রিলিজ হয় তখন আমাদের মনের মধ্যে কিছুটা সুখের অনুভূতি আসে। তাই ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যেহেতু মানসিক কন্ডিশনের সাথে সম্পর্কিত তাই একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রিসার্চ করা হয়।

যেখানে এটা পরীক্ষা করে দেখা হয় যে ঠান্ডা হয় যে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে এটা ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে কোন কাজে দেয় কিনা। এরপর কয়েকজন ডিপ্রেশনের রোগীকে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করে ঠান্ডা পানিতে পাঁচ মিনিট করে গোসল করানো হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করানোর জন্য তাদের ডিপ্রেশনের লক্ষণ অনেকাংশে কমে গেছে। এছাড়াও আমরা যখন ঠান্ডা পানিতে গোসল করি তখন আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূতি পাই। আর এই ঠান্ডা অনুভূতি আমাদের ব্রেনে অনেকগুলো ইলেকট্রিক ইমপালস পাঠায় যার জন্য আমরা অনেক এলার্ট ফিল করি। আমাদের এনার্জি লেভেল অনেক ত্বরান্বিত হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অল্প একটু কিছু হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার অনেকে আছেন যারা খুব একটা অসুস্থ হন না। রোগ জীবাণু ছড়ানো একই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস একই সাথে দুইজন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হলে দেখা যাবে যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিন্তু আরেকজন সুস্থই আছেন।

এর কারণ হচ্ছে যিনি অসুস্থ হননি তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের তুলনায় বেশি। তার শরীরের রক্তের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস গুলোকে মেরে ফেলতে অর্থাৎ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে এজন্যই তিনি অসুস্থ হননি। অপরদিকে যে ব্যাক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার শরীরের রক্তে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সেগুলো ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে তাদেরকে মেরে ফেলতে সক্ষম হতে পারেনি।

ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ আমাদের রক্তে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করার জন্য যে সকল কোষ রয়েছে সেগুলো শক্তিশালী হয়।

রক্ত চলাচল ভালো হয়ঃ ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে আমাদের রক্ত চলাচল ভালো হয়। যার ফলে আমাদের শরীরে কোথাও কোন আঘাত জনিত ব্যথা বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে সেটা অতি দ্রুত সেরে উঠে

কাদের ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিত নয়

ঠান্ডা পানিতে গোসল করার উপকারিতা তো আছেই এরই সাথে এর কিছু খারাপ দিকও আছে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করা একদমি উচিত নয়। বিশেষ করে আমাদের মধ্যে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিত নয়।

গরম পানিতে গোসল করার উপকার কি কি

ঠান্ডা সর্দির উপসর্গ কমে যায়ঃ আপনার যদি ঠাণ্ডা সর্দি লেগে থাকে তাহলে গরম পানিতে গোসল করার ফলে আপনাকে ঠান্ডা সর্দির উপসর্গ কিছুটা হলেও কমে যাবে।
গায়ের ময়লা পরিষ্কার করেঃ প্রতিদিন গোসল করার পেছনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের পুরো শরীরের ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করা। ঠান্ডা পানির তুলনায় গরম পানি দিয়ে আমাদের শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা অনেকটাই সহজ।

শরীর ও মন ফ্রেশ করেঃ গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আমাদের শরীর ও মন ফ্রেশ হয়। অর্থাৎ গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে আমাদের Parasympathetic Nervous System সক্রিয় হয়। যার ফলে আমাদের মাংসপেশী রিল্যাক্সড হয়। তারমানে আপনি গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে আপনি অনেকটাই রিল্যাক্সড ফিল করবেন। তাই আপনি যদি ঘুমানোর পূর্বে গরম পানি দিয়ে গোসল করে ঘুমান সেক্ষেত্রে আপনার ঘুমটা অনেক আরামদায়ক হবে।

গরম পানিতে গোসল করার ক্ষতিকর দিক

চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়াঃ গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে আপনার চামড়া খসখসে হয়ে যেতে পারে। আমাদের শরীরের চামড়ার উপরের যে লেয়ারটা আছে এটার নাম হলো "Epidermis"। আমাদের চামড়ার এই অংশে কেরোটিন নামক এক ধরনের কোষ থাকে। গরম পানিতে গোসল করার কারণে আমাদের শরীরের চামড়ার এই কোষটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় বা যেতে পারে।

যার ফলে আমাদের শরীরের যে আর্দতা ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে সেটা কমে যায়। এতে করে আমাদের ত্বক অনেক শুষ্ক হয়ে যায়। শীতের দিনে এমনিতেই আমাদের শরীরের ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে তার উপরে আমরা যদি গরম পানি দিয়ে গোসল করি তাহলে আমাদের ত্বক আরও বেশী শুষ্ক হয়ে পড়বে। বিশেষ করে আমাদের মধ্যে যাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ যেমন, চুলকানি বা একজিমা আছে তারা যদি শীতকালে গরম পানি ব্যাবহার করে গোসল করে সেক্ষেত্রে তাদের এই সমস্যাটি আরও বেড়ে যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url