বন্ধ নাক খোলার ঘরোয়া উপায়সমূহ

বন্ধ নাক খুবই বিরক্তিকর একটা সমস্যা। বিশেষ করে শীতকালে কিছু সময় আমাদের নাক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে থাকে আবার কিছু সময় নাক দিয়ে পানি ঝরে। এতে করে আমাদের নাক দিয়ে শ্বাস নিতেও সমস্যা হয় শ্বাস ছাড়তেও সমস্যা হয়। না বন্ধ হয়ে থাকার কারণে আপনার মনে হতে পারে যে আপনার নাকে প্রচুর পরিমানে শ্লেষ্মা জমে আছে। কিন্তু এই অবস্থায় যখন আপনি নাক পরিষ্কার করতে যাবেন দেখবেন যে কিছুই বের হবে না। তাহলে এই বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় কি?
আমাদের নাকের মধ্যে রক্তনালীর দ্বারা তৈরি ভাল্ব আছে যা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজের জন্য খোলা এবং বন্ধ হয়। যখন আপনি কোনো কিছুর দ্বারা সংক্রমিত হন তখন আপনার নাকের আনুসাঙ্গিক স্নায়ু উদ্দীপিত হয়। যার ফলে আপনার নাকের ভাল্ব খোলা হয় এবং এতে আগের তুলনায় আরও বেশী রক্ত প্রবেশ করে। আর এই বেশী রক্ত প্রবেশ করার ফলেই আপনার নাকে আংশিক ফোলাভাবের সৃষ্টি করে যা আপনার নাককে আটকে রাখে। বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

নাক বন্ধ হওয়ার কারণ

নাক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার মধ্যে নিম্নলিখিত কারণে আমাদের নাক বন্ধের সমস্যাটি হয়ে থাকেঃ-
  • ব্যাকটেরিয়া
  • ভাইরাল এবং ছত্রাক সংক্রমণ
  • সাধারণ সর্দি
  • সাইনোসাইটিস(Siusitis)
  • অ্যালার্জি
  • অ্যাজমা বা হাপানি
  • বিচ্যুত নাকসংক্রান্ত রোগ
  • নাকের পলিপাস
পরিস্থিতি অনুসারে নাকের সমস্যার বিভিন্ন চিকিৎসা রয়েছে। যখনই আপনি নাক বন্ধ হয়ে থাকার সমস্যা যেমন, হাঁচি, জ্বর, সাধারন সর্দি বা নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরার মতো সমস্যাগুলো অনুভব করবেন বা এগুলো যদি দশ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। যাইহোক নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই সুফল পাওয়া যায়। ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করার মাধ্যমেই বন্ধ নাকের এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

বন্ধ নাক খোলার ঘরোয়া উপায়সমূহ

১. গরম পানির ভাপ নেওয়াঃ গরম পানির ভাপ বন্ধ নাকের জন্য কার্যকর ঘরোয়া উপায়সমূহের মধ্যে একটি। বিরক্তিকর বন্ধ নাকের থেকে মুক্তি পাওয়ার সুপ্রাচীন পদ্ধতি এটি। প্রথমে একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে মাথার উপর দিয়ে মুখ গরম পানির পাত্রের কাছে নিয়ে গিয়ে ৫ থেকে১০ মিনিট বাষ্প নিতে হবে। আপনি চাইলে এই গরম পানির মধ্যে এন্টিসেপটিক ভেষজ যেমন পেপারমিন্ট দিতে পারেন। এর ফলে পানির উষ্ণতা আমাদের নাকে থাকা শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে বের হয়ে যাবে। বর্তমানে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে রূপচর্চাও করে থাকেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই আপনার মুখকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।


২. গরম পানি দিয়ে সংকুচিত করাঃ গরম পানিতে তোয়ালে বা এক টুকরো কাপড় ভিজিয়ে নিন। তারপর সেই তোয়ালে বা কাপড় থেকে পানি ঝরিয়ে নিয়ে গরম কাপড়টি আপনার নাকে-মুখে লাগিয়ে রাখুন। এভাবে ৩ থেকে ৪ বার করুন। দেখবেন আপনি আপনার বন্ধ নাক থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন।

৩. আদাঃ বন্ধ নাকের সমস্যা সমাধানে আদা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদের নাক বন্ধ হওয়া কমাতে সাহায্য করে। বন্ধ নাকের জন্য ২ কাপ পানির মধ্যে অল্প সামান্য আদা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর এতে একটা কাপড় ভিজিয়ে কাপড়টি আলতো করে আপনার মুখের উপরে ১৫ মিনিট এর মতো রেখে দিন। আপনি চাইলে প্রতিদিন ২/৩ বার আদা চা খেতে পারেন এতে করে আপনার নাক বন্ধের পাশাপাশি কাশি থেকেও নিস্তার পেতে পারেন।

৪. মধুঃ মধু বহুমুখী এবং বিভিন্ন রোগের উপশমের জন্য বেশ কার্যকরী উপাদান। বন্ধ নাকের ক্ষেত্রেও এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। মধু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। এটিতে একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ছড়ানো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। মধু আমাদের বিরক্তিকর বন্ধ নাকের সমস্যা এবং গলার শুষ্ক কাশি উপশমের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
এক কাপ হালকা গরম পানির সাথে দুই টেবিল চামচ মধু আপনার বন্ধ নাক খুলতে সহায়তা করবে। আপনি এটি গরম দুধ কিংবা চায়ের সাথেও ব্যাবহার করতে পারেন।

৫. রসুনঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সর্বোত্তম উৎস হলো রসুন। রসুনে থাকা এই উপাদানটি আপনার শরীরের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। এটি মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে যা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন অল্প সামান্য রসুন চূর্ণ করে বিভিন্ন সূপ এর সাথে খেতে পারেন এতে করে আপনার নাক বন্ধ হওয়ার বিরুদ্ধে কাজে আসবে।


৬. আঙ্গুরের রসঃ আঙ্গুর হল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে Quercetin নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অ্যান্টি-অ্যালার্জিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বন্ধ নাক কিংবা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের উপশমের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, গরম জলে কয়েক ফোঁটা আঙ্গুরের রস যোগ করুন এবং শ্বাস নিন। এই নির্যাসের বাষ্প তাৎক্ষণিকভাবে আপনার বন্ধ নাক খুলে দিতে সাহায্য করবে।

৭. পেঁয়াজঃ ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে পেঁয়াজ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সমৃদ্ধ। পেঁয়াজে একটি শক্তিশালী গন্ধ আছে যা ৫ মিনিটের মধ্যে আপনার বন্ধ নাক খুলে দিতে সক্ষম।

নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করার উপায়

কয়েক মিনিটের মধ্যে নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় খুজছেন? নিচে নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া কার্যকরী কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলোঃ
১.গরম পানি পান করাঃ সর্দি কাশি বা বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যার সমাধানে গরম পানি পান করা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানি আস্তে আস্তে পান করার মাধ্যমে আপনার বন্ধ নাক, সর্দি কিংবা নাকের জ্বালাপোড়া প্রশমিত করতে সাহায্য করে থাকে।

২.নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যাবহার করাঃ ঠান্ডা বা সর্দি লাগার কারণে আমাদের নাক বন্ধ হয়ে থাকে এবং নাকের মধ্যে জ্বালাপোড়া করে। এই সমস্যার সমাধানে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যাবহার করতে পারেন। এতে করে মুহুর্তের মধ্যেই আপনার নাকের শ্লেষ্মা এবং জ্বালা দূর করতে সাহায্য করবে।

৩.অ্যাকুপ্রেসার পদ্ধতি অবলম্বনঃ আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু প্রেশার পয়েন্ট আছে, যেখানে চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে রোগমুক্তি মেলে। তেমনি করে আমাদের নাকেরও প্রেসার পয়েন্ট আছে। আস্তে আস্তে করে আপনার আঙ্গুলগুলোকে নাকের ছিদ্রের কাছে রেখে এক মিনিটের মতো চেপে ধরে রাখুন। এতে করে আপনি তাতক্ষণিক আরাম অনুভব করবেন।

৪.পেপারমেন্ট অয়েল ব্যাবহারঃ নাকের পাশে অল্প পরিমাণ মিশ্রিত পেপারমেন্ট অয়েল লাগান। যা আপনাকে একটি শীতল অনুভূতি প্রদান করবে এবং আপনার নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করবে।

৫.মসলাযুক্ত খাবার খাওয়াঃ মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে আপনার বন্ধ নাক খুলে দিবে এবং নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করবে।

মন্তব্য

মনে রাখবেন উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো আপনাকে অস্থায়ীভাবে নাক বন্ধ হওয়া বা নাক দিয়ে পানি পড়া থামাতে সাহায্য করবে। যদি উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করার পরেও নাক দিয়ে পানি পড়া অব্যাহত থাকে তাহলে একজন পেশাদার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করুন। বিশেষ করে হাইড্রেটেড থাকা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url