শীতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরন করার উপায়
ভিটামিন আমাদের শরীরের অতীব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যা ছাড়া আমাদের সুষ্ঠ জীবনযাপন করা অসম্ভব। ভিটামিন-ডি ভিটামিন এর ই একটি অংশ। আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ কাজে এই ভিটামিন-ডি এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।আমরা অনেকেই এই ভিটামিন-ডি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানি না।
আমরা জানি যে শীতকালে আমাদের মধ্যেকার অনেকেই ভিটামিন-ডি এর অভাবে বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতায় ভূগে। কিন্তু আমরা শীতকালে ভিটামিন-ডি এর অভাব পুরণ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানি না। ভিটামিন-ডি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পুরো পড়ার অনুরোধ করা হলো।
কোন খাবার আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে
বিভিন্ন উৎস হতে আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। ভিটামিন ডি এর সর্বোৎকৃষ্ট উৎস হলো সূর্য। তবে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব খাবার খেয়ে থাকে সেগুলো থেকেও আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। বিশেষ করে দুগ্ধ জাত খাবার আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে সহায়তা করে থাকে। আমাদের শরীর সুস্থ সবল রাখার জন্য ভিটামিন ডি এর গুরুত্ব অনেক।
আরও পড়ুনঃ- বন্ধ নাক খোলার ঘরোয়া উপায়সমূহ
যেহেতু ভিটামিন কি আমাদের শরীরের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাই ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সুস্থতা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলোঃ-
ডিমঃ ডিমে খুবই সামান্য পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে। তবুও নিয়মিত ডিম খাওয়া আমাদের স্বাস্থের পক্ষে উপকারী। তবে আমাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল আছে তারা ডিমের কুসুম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পালং শাকঃ সবজির মধ্যে সবচেয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার হলো পালং শাক। পালং শাকে প্রায় সকল ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা মিটানোর জন্য পালং শাক খুবই উপকারী।
লিভার বা যকৃতঃ রান্না করা গরুর লিভার বা যকৃতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে। আমাদের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা মিটানোর জন্য এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে এই খাবারে প্রচুর পরিমানে কোলেস্টেরল থাকায় পরিমিত হারে খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ- শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
কমলার জুসঃ কমলার জুসে ভিটামিন ডি থাকে। বাজারে প্যাকেটজাত কমলার জুস পাওয়া যায়। এর দ্বারা আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। তবে প্যাকেটজাত কমলার জুস খাওয়ার আগে এর উপাদানসমূহ ভালোভাবে পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
মাশরুমঃ মাশরুমে যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি ভিটামিন ডি প্রচুর পরিমাণে থাকে তা আমরা সকলেই জানি। সূর্যের আলো থেকে একটি মাশরুম শক্তি গ্রহন করে ভিটামিন ডি তৈরি করে থাকে এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। ভিটামিন ডি এর উথস হিসেবে মাশরুম উত্তম খাবার হিসেবে পরিচিত।
সোয়া মিল্কঃ সোয়া মিল্কে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। এই প্রোটিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। নিয়মিত সোয়া মিল্ক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরন হওয়া সম্ভব।
ডালজাতীয় খাবারঃ ডালজাতীয় খাবার ভিটামিন ডি বিদ্যমান। তাই শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে ডালজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ হলো ভিটামিন ডি এর আদর্শ উথৎ। দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার কারণ দুধে খাদ্য উপাদানের সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাই শরীরের ভিটামিন ডিএর ঘাটতি পূরণ করার জন্য নিয়মিত দুধ পান করা উচিত।
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন ডি এর আদর্শ উথস। সুমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে জন্ম নেওয়া সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। বিশেষ করে স্যালমন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সারদিনস, টুনা, ম্যাককেরেল মাছে বেশী পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। তাই শড়িরের ভিটামিন ডী এর ঘাটতি পূরণে সামুদ্রিক মাছের বিকল্প নেই।
বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবারঃ আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় বাদাম জাতীয় খাবার রাখার অনেক সুবিধা আছে। কারণ বাদাম জাতীয় খাবার ভিটামিন ডি এর একটি আদর্শ উৎস।
কয়টার রোদে ভিটামিন ডি থাকে
আমরা সকলেই জানি যে সূর্যের আলো হচ্ছে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর উপযুক্ত উৎস। মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট রোদে থাকার মাধ্যমেই আমরা আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি। কিন্তু আমাদের সকলের মধ্যেই একটা অজ্ঞতা আছে যে দিনের কোন সময়ের রোদে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ- হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কি কি
সকাল ১০টা থেকে ৩টার আগে এই সময়ের মধ্যে রোদে গা লাগিয়ে বসা অনেক উপকারী। তবে দিনের অন্যান্য সময় গুলোতে বিশেষ করে দুপুরের পরে রোদে না যাওয়ায় উত্তম। কারণ দিনের এই সময়ের রোদে ক্ষতিকর রশ্মি থাকা যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে।
শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়। অর্থাৎ শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে শিশুর পা বেঁকে যাওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া সহ আরও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এর মূল কারণ, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মির দ্বারা আমাদের ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরি হয়ে থাকে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত এই সময়কালের রোদ ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার সঠিক সময়।
আরও পড়ুনঃ- ভেষজ পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়সমুহ
কিন্তু বর্তমানের শিশুরা দিনের এই সময়টাতে স্কুল বা নিজ বাড়িতেই অবস্থান করে। তাদের বাহিরে খেলাধুলা করার প্রবণতাও অনেক কমে গেছে। এতে করে তারা রোদে একটু সময় কাটানোর সুযোগই পাচ্ছে না। তাই তাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
শীতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরন করার উপায়
বছর ঘুরে শীত আমাদের মাঝে চলেই আসে। শীতের সময় আমরা দিনের বেশীরভাগ সময়টাই ঘরের মধ্যে কাটিয়ে দিই। এজন্য আমাদের মাঝে অনেকে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয়। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ এই সময়টাতে আমরা বাহিরে রোদে সময় কাটানোর সুযোগই পাইনা। এতে করে সূর্যের আলো থেকে আমাদের শরীরে যে ভিটামিন ডি তৈরি হতো সেইটা আর হতে পারে না।
তাই শীতকালে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করার জন্য নিম্নের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারি। শীতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরন করার উপায়ঃ-
১. শরীরে রোদ লাগানোঃ শিতকালে আমরা রোদে সময় কাটাইনা বলেই আমাদের শরীরে ব্যাপক হারে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয়। তাই শীতকালে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রোধে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভালো করে শরীরে রোদ লাগানো উচিত।
২. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরী। বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি বিদ্যমান। শরীরের ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণঃ অসুস্থতার কারণে বা অন্য কোনো কারণবশত রোদে যেতে না পারলে বা ডিম খেতে না পারলে আপনি ভিটামিন ডী সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহন করতে পারেন। এতে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বাড়বে।
ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত লক্ষণ
আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে আমাদের বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো হলোঃ-
- হাঁড়ে ব্যাথা
- ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া
- নিদ্রাহীনতা
- চুল পড়া
- বিষন্নতা
- অত্যধিক ক্লান্তি
- হাড়ের ক্ষয়
- অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
- পিঠে ব্যাথা অনুভূত হওয়া
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে কোন খাবার আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে, কয়টার রোদে ভিটামিন ডি থাকে, শীতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরন করার উপায়, ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত লক্ষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে বা ভালো লাগলে আপনার পরিচিত ব্যাক্তিদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url