হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

বর্তমানে দূষিত পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষেরা নানা রোগ-জীবাণু তে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই অসুস্থতার বেড়েই চলেছে। তেমনি করে বর্তমানে মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের হারও বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমরা অনেকেই শ্বাসকষ্টের সঠিক সাধারণ চিকিৎসা সম্পর্কে জানিনা।
শ্বাসকষ্টের রোগীর যত্ন নেওয়ার নিয়ম
এই আর্টিকেলটিতে শ্বাসকষ্টের রোগীর কিভাবে চিকিৎসা করতে হয় সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়া চেষ্টা করবে। আর্টিকেলটি পড়লে আপনি শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ করছি।

শ্বাসকষ্ট

সহজ অর্থে শ্বাসকষ্ট বলতে শ্বাস-প্রঃশ্বাসের সমস্যাকে বুঝায়। অর্থাৎ যখন স্বাভাবিকের তুলনায় শ্বাস নিতে বেশী সমস্যা অনুভূত হবে তখন সেই অবস্থাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। শ্বাসকষ্ট একটি মারাত্নক অসুখ। শ্বাসকষ্ট হলে মানুষ ও প্রানী উভয়েরই প্রাণের ঝুকি থাকে। তাথক্ষণিকভাবে একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর মৃত্যু ঘটে।

শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

শ্বাসকষ্ট একটি প্রাণঘাতি ব্যাধী। শ্বাসকষ্টের কারণে মানুষের মৃত্যুর ঝুকি অনেকংশে বেড়ে যায়। তবে সুষ্ঠ-পরিকল্পিত জীবনযাপনের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে আমরা শ্বাসকষ্ট রোধ করতে পারিঃ
১. ধূমপান ত্যাগঃ ধূমপান করলে এটি আমাদের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই শ্বাসকষ্টের ঝুকি থেকে বাচতে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস আপনার ফুসফুস এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এতে করে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যাকে হ্রাস করতে সাহায্য করে।


৩. নিয়ন্ত্রিত ওজনঃ আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে পারেন তাহলে এটি আপনাকে একটি সুন্দর ও সুস্থ জীবন পরিচালনায় সহযোগীতা করবে। অনিয়ন্ত্রিত ওজন আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা ঘটায় পাশাপাশি এটি আপনার শ্বাসকষ্টের কারণ হিসেবে দাড়াতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে নিয়ন্ত্রিত ওজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হ্রাস করতে পারবেন। পার্সড-ঠোঁট শ্বাস এবং ডায়াফ্রাম্যাটিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো ব্যায়ামগুলো করার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সমস্যার উন্নতি করতে পারবেন।

৫. মাস্ক ব্যাবহারঃ যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোয়া ও দূষিত পরিবেশের কারণে আমাদের শ্বাসকষ্টের দেখা দেয়। আর শিল্পায়নের কারণে পরিবেশে অনেক ধূলা-বালি ভেসে বেড়ায়। যা আমাদের নাকে প্রবেশ করে আমাদের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব ধূলা-বালি থেকে বাচতে বাহিরে যাওয়ার সময় সবসময় মাস্ক ব্যাবহার করুন। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের ঝুকি অনেকটা কমে যাবে।

শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ খেতে হবে

ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। শীতকালে মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশী দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ফুসফুসজনিত সমস্যার কারণেও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। উক্ত সমস্যা দেখা দিলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা উচিত। শ্বাসকষ্টের জন্য ডাক্তারেরা সাধারণত যেসকল ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • Brodil 4
  • Dexoven 200
  • Salmolin (Inhaler)
  • Bexitrol (Inhaler)
  • Doxiva 200
  • Monas 10
  • Fenadin 120
বিঃদ্রঃ- বিভিন্ন কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তাই অভিজ্ঞ রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পর যেকোনো ঔষধ খাওয়া উচিত।

হঠাৎ শ্বাসকষ্টের প্রাথমিক চিকিৎসা

পরিবর্তিত জলবায়ু এবং দূষিত পরিবেশের কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শীতকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যাটি বেশী দেখা যায়। নানা কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে এটির উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই যদি সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


শ্বাসকষ্টের সমস্যাটি হঠাৎ দেখা দিতে পারে। তাই তাথক্ষণিকভাবে হঠাৎ শ্বাসকষ্টের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা জরুরি। নিচে শ্বাসকষ্টের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলোঃ
১. চেয়ারে বসে টেবিলের উপরে একটা বালিশ রেখে তার উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।

২. আবার একটা চেয়ারকে সাপোর্ট হিসেবে ব্যাবহার করে ঝুকে থাকলেও এই সমস্যার থেকে আরাম পাওয়া যায়।

৩. হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে মাথার দিকটা উচু করে পা ভাজ করে রেখে কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে।

৪. দেয়ালের কাছে থেকে অল্প সামান্য দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ালে শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

৫. এসময় হালকা গরম পানীয় যেমন চা, কফি কিংবা গরম পানি পান করলে আরাম পাওয়া যায়।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

হাপানী বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের খাদ্যাভ্যাস এ অত্যান্ত সতর্কতার সাথে মেনে চলতে হবে। কিছু খাবার আছে যা শ্বাসকষ্টের সমস্যাটি বাড়িয়ে তোলে আবার কিছু খাবার আছে যা শ্বাসকষ্টের সমস্যাটিকে নিরাময় করতে সহায়তা করে থাকে। একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
১. হাপানি বা শ্বাসকষ্টের সাথে অ্যালার্জির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। মূলত অ্যালার্জির ফলেই হাপানি বা শ্বাসকষ্টের শুরু হয়। তাই একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জির সূচনা হয় সেসব খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।


২. প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা। কারণ এসব খাবারে সালফাইটের পরিমাণ বেশী থাকে। আর একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য সালফাইট খুবই ক্ষতিকর একটা উপাদান।

৩. ঠান্ডা খাবার যেমন, দই, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংকস ইত্যাদি খাবারগুলো এড়িয়ে চলা। কারণ ঠান্ডা খাবার খাওয়ার ফলে আপনার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।

৪. আমাদের মধ্যে অনেকেরই ডিম খেলে অ্যালার্জি দেখা দেয়। এছাড়াও গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, হাসের মাংস, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি খাবারে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তাই একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য এসব জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।

৫. চিংড়ি মাছে অনেকেরই অ্যালার্জি রয়েছে। চিংড়ি মাছ একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য খাওয়া উচিত নয়।

শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে

শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সমস্যার অনেক উন্নতি করতে পারি। এসব খাবার আপনার ফুসফুসের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিত সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খেতে হবে
  • গাজর
  • আপেল
  • সামুদ্রিক মাছ
  • আদা চা
  • রসুন
  • আরও পড়ুনঃঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
  • মধু
  • কলা
  • ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
  • ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
  • ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
বিঃদ্রঃ- মনে রাখবেন সবার সব খাবারে অ্যালার্জি হয় না।

লেখকের মন্তব্য

উক্ত আর্টিকেলটি একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আর্টিকেলে একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কি কি করণীয় ও একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো খাওয়া উচিত নয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনার পছন্দ হয়েছে।

আর্টিকেলটি আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করে তাদেরকেও একজন শ্বাসকষ্টের রোগীর কিভাবে সেবা যত্ন করতে হয় তা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url