আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ - Ayatul kursi bangla

পবিত্র কোরআন মাজীদকে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কল্যাণের জন্য নাজিল করেছেন। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটি একটি আদর্শ জীবন বিধান। এই কোরআন মাজিদে অনেকগুলো সূরা আছে তার মধ্যে দ্বিতীয় সূরা আল বাকারার ২৫৫ তম আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। এই আয়াতুল কুরসি মানবজাতির জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণ আয়াত।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
এই আর্টিকেলটিতে আয়াতুল কুরসির অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও এর বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ করছি।

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ - Ayatul kursi bangla

পবিত্র কোরআন মাজীদের সূরা আল বাকারার ২৫৫ তম আয়াত হল আয়াতুল কুরসি। এই আয়াতে ১০ টি বাক্য রয়েছে। এই আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেকটি ক্ষমতার বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে বিভিন্ন বিপদ আপদ ও মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি পাঠ করলে মানবজাতির কল্যাণ সাধিত হয়।
শুআবুল ঈমান (২৩৯৫) এ বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

"যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না।"

আমরা অনেকেই আছি যারা এই আয়াতুল কুরসি সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারি না এবং আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আর্টিকেলের এই অংশে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও এর অর্থ দেওয়া হলোঃ

আয়াতুল কুরসিঃ

বাংলা উচ্চারণঃ
আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)। (উচ্চারণটি কোনো কোরআন বিশেষজ্ঞের কাছে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া উচিত)
বাংলা অর্থঃ
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক উচ্চারণে ও অর্থ জেনে মানবজাতির জন্য কল্যাণকর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করার ৬টি ফজিলত

পবিত্র আল কোরআন এর সূরা আল-বাকারার ২৫৫ তম আয়াত মুসলিম মানবজাতির জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আয়াত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

"আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আয়াতুল কুরসীর একটি জিহবা ও দুটি ঠোট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে।" (মুসনাদে আহমদ: ২১৬০২)

আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াতের ফজিলতের মধ্যে থেকে ৬ টি ফজিলত নিচে তুলে ধরা হলোঃ

১. আবু উমামা (রাঃ) বর্ণিতঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি প্রত্যেকবার ফরজ নামায শেষে আয়াতুল কুরসী তেলাওয়াত করে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন কিছু বাধা থাকে না।" (সহীহ আল জামে :৬৪৬৪)

২. হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- "যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন।"

৩. রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাজতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হয়ে কোনোরুপ ক্ষতি না করতে পারে। (বুখারি)


৪. হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিতঃ হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে।" (মুস্তাদরাকে হাকিম:২১০৩)

৫. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "কেউ যদি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে বা অন্তত ফজর এবং মাগরিব নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ইনশাল্লাহ আল্লাহ তায়ালা পাঠকারীকে পুরো দিন ও পুরো রাত যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন।"

৬. প্রতি নামাজ শেষে ও ঘুমানোর আগে বেশী বেশী আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে শয়তান ও দুষ্ট জ্বিনের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা যায়।

ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

মানবজাতির জন্য আল কোরআন একটি আদর্শ জীবন বিধান। মানবজাতির জন্য কল্যাণ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য রাসুল (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন মজিদ নাযিল হয়েছে। রাসূল (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত হলো সূরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত, আয়াতুল কুরসি।


একজন ইমানদার মুমিন ব্যাক্তির জন্য আল্লাহর নামে শুরু করা প্রত্যেকটি কাজই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত। তাই ঘুমন্ত অবস্থাতেও আমরা আল্লাহর ইবাদত করতে পারি। আল্লাহর নামে ঘুমও একটি শান্তিময় ইবাদত। বুখারি শরীফে বর্ণিত আছে,

"রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাজতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হয়ে কোনোরুপ ক্ষতি না করতে পারে।"

অর্থাৎ, রাতে ঘুমানোর আগে যদি কোনো ব্যাক্তি পবিত্র কোরআন মাজীদের সূরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত (আয়াতুল কুরসি) পাঠ করে ঘুমাতে যায় তাহলে ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করার পাশাপাশি ঘুমন্ত অবস্থাতে শয়তান ও দুষ্ট জ্বীনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য একজন ফেরেসতা নিযুক্ত করে দিবেন, ইনশাল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআন মাজীদের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ আয়াত। এটি মানব জাতির কল্যাণ সাধন ও আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতার বর্ণনা দিয়ে থাকে। পবিত্র কুরআন মাজীদের প্রত্যেকটি হরফ উচ্চারণ করার মাধ্যমে আমরা নেকি লাভ করতে পারি। ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ তেলাওয়াত করা সুন্নত। প্রত্যেকবার ফরজ নামাজ আদায় করার পর এই আয়াতুল কুরসি পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

"যে ব্যক্তি প্রত্যেকবার ফরজ নামায শেষে আয়াতুল কুরসী তেলাওয়াত করে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন কিছু বাধা থাকে না।"

আয়াতুল কুরসির এই বিশেষ ফজিলত পাওয়ার জন্য আমরা আমাদের প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস তৈরি করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

রাতে ঘুমানোর আগের কিছু আমল

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, 
"তোমাদের নিদ্রাকে করেছি— ক্লান্তি দূরকারী।" (সুরা নাবা, আয়াত : ০৯)


আল্লাহর নামে শুরু করা প্রত্যেকটি কাজের মাধমে আমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে পারি। তাই আমাদের ঘুমও যেন ফজিলতপূর্ণ হয় সেজন্য আমরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু আমল করে ঘুমাতে যেতে পারি। রাতে ঘুমানোর আগের কিছু আমল করার জন্য নিচে দেওয়া আমলগুলো করতে পারেনঃ-
  • ভালোভাবে ওযু করা
  • তিন কুল পড়ে ফুঁ দেওয়া
  • আয়াতুল কুরসি পড়া
  • সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত
  • সুরা কাফিরুন পাঠ করা
  • কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ
  • ডান হাত গালের নিচে রেখে ঘুমানোর দোয়া পড়া
  • তাসবিহের আমল করা
  • সুরা মুলক পাঠ করা
  • ডান কাত হয়ে ঘুমানো

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আয়াতুল কুরসি অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করার ফজিলত, ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত, ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত ও রাতে ঘুমানোর আগের কিছু আমল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।

আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আর্টিকেলটি ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকে আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে জেনে এর উপরে আমল করার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url