কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম - কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে কালোজিরা ব্যাবহার হয়ে আসছে। কালোজিরা যে শুধু খাওয়া বা রান্নার কাজেই ব্যাবহৃত হয় এরকম নয়। এটি আমাদের বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে কালোজিরা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিস্ময়কর তথ্য যেমন- কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম, কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা, কালোজিরা তেলের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও আর্টিকেলটিতে কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা নিয়েও আর্টিকেলের নিচের অংশে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কালোজিরা সম্পর্কিত এসব প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
মানবদেহের বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হলো কালোজিরা। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত আছে যে, একমাত্র মৃত্যু ব্যাতীত সকল রোগের মহৌষধ হলো কালোজিরা। এথেকে বুঝা যাচ্ছে যে কালোজিরা কাওয়ার বিশেষ কোনো নিয়মকানুন নেই।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে কালোজিরার সর্বোত্তম কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে এর সুফল পাওয়া যায়। নিচে কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ
- কালোজিরার ভর্তা বানিয়ে।
- গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে।
- বিভিন্ন পিঠা বানানোর সময়।
- বিভিন্ন ভাজা-পোড়ার সাথে।
- চা এর সাথে মিশিয়ে।
- সকাল বেলা খালি পেটে পানির সাথে।
- পান এর সাথে।
- এক চামচ মধুর সাথে ১-২.৫০ গ্রাম কালোজিরা মিশিয়ে।
- এছাড়াও আপনি চাইলে এক চিমটে কালোজিরা খালি মুখে চিবিয়েও খেতে পারেন।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ হলো কালোজিরা। এই কালোজিরা খাওয়ার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ উপকারিতা। এটি একদিকে যেমন আপনার শরীরে থাকা বিভিন্ন রোগের সমাধান দিয়ে থাকে পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেহকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে থাকে।
কালোজিরার পাশাপাশি এটিকে আরও বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেনো এই কালো বীজের বিশেষ গুণাগুণ আমাদের মানবদেহের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধণে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি এটি আমাদের শরীরের কোষ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে এবং কোষের কার্যকারীতাও বৃদ্ধি করে দেয়। তাহলে চলুন এই বিশেষ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
- মাথাব্যাথা নিরাময় করে।
- স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে।
- সর্দি সারিয়ে তুলে।
- বাতের ব্যাথা উপশম করে।
- নানাবিধ চর্মরোগ ভালো করে।
- কিডনির পাথরের সমস্যা সমাধান করে।
- চোখের ব্যাথা দূর করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ডায়রিয়া সমস্যা সমাধান করে।
- জ্বর ভালো করে।
- বিভিন্ন স্নায়ুবিক উত্তেজনা কমায়।
- আচিল ভালো করে।
- চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুনঃঃ মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়
- দাতের ব্যাথা দূর করে।
- ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
- মুখের অরুচি ভালো করে।
- মাইগ্রেন সমস্যা সমাধান করে।
- আমাশয় ভালো করে।
- জন্ডিস ভালো করে।
- এলার্জি প্রতিরোধ করে।
- চুলপড়া কমায়।
- পেট ব্যাথা কমায়।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- শ্বাসকষ্ট সমস্যা সমাধান করে।
- হার্ট ভালো রাখতে।
- সর্বোপরি মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কালোজিরা তেলের উপকারিতা
খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আমরা খাবারে কালোজিরা ব্যাবহার করে থাকি। এটি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থের জন্যেও বেশ উপকারী। তরকারি কিংবা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন- সিঙ্গারা, সমুচা, পাপড়, নিমকি, বিস্কুট ইত্যাদিতেও এই কালোজিরার ব্যাবহার দেখতে পাওয়া যায়।
কালোজিরার তেল আমাদের মানবদেহের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ এক নিয়ামক। আয়েশা (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হয়েছে তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন "এই কালোজিরা মৃত্যু ব্যাতীত সব রোগের ঔষধ"(বুখারিঃ ৫৬৮৭)। নিয়মিত কালোজিরার তেল খাওয়ার অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে রোগমুক্ত রাখতে সক্ষম। তাহলে চলুন এই কালোজিরা তেলের উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
মাথা ব্যাথা নিরাময়েঃ বর্তমানে মাথাব্যাথার সমস্যায় ভুগছে এমন মানুষ প্রচুর রয়েছে। মাথাব্যাথার সমস্যা সমাধানে কালোজিরার তেল বেশ উপকারী। অল্প সামান্য কালোজিরার তেল কপালে লাগিয়ে বিশ্রাম করলেই এই মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি মিলবে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথাব্যাথা দূর করার ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
জয়েন্টের ব্যাথা উপশমেঃ এক মুঠো কালোজিরা নিয়ে এটি সরিষার তেলের সাথে ভালোভাবে গরম করে নিন। এ থেকে যখন ধোঁয়া উঠতে শুরু করবে তখন তেলটিকে ঠান্ডা করে নিয়ে জয়েন্টের ব্যথার জায়গায় ভালোভাবে মালিশ করুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে আপনার জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ কালোজিরার তেলের যেসকল উপকারিতা রয়েছে তাদের মধ্যে এই উপকারিতাটা উত্তম। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন সকালে লাল চায়ের সাথে আধা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিয়মিত পান করে দেখুন। এতে আপনার অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ ছোট বাচ্চা কিংবা প্রাপ্তবয়ষ্কদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা বেশ কার্যকরী। এজন্য আপনাকে কালোজিরার সাথে সামান্য পরিমান মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। এই নিয়মে প্রায় ৪০ দিন খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সমস্যার নিরাময় হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনোরূপ ঠান্ডা জাতীয় কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা উচ্চ রক্তচাপের মতো মরণব্যাধী সমস্যায় ভুগছেন। প্রতিদিন গরম পানির সাথে আধা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে এরকম খাবার খাওয়াটাও জরুরি।
দাঁত সুস্থ রাখতেঃ মাড়ি ফুলে যাওয়া বা দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া ভালো করতে কালোজিরার তেল কাজে আসে। প্রতিদিন দুইবার করে কালোজিরার তেল ম্যাসাজ করার মাধ্যমে এই সকল সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি এটি আমাদের দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে।
কিডনি সুস্থ রাখতেঃ কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যাটি আমাদের মাঝে বেশ পরিচিত। প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সাথে আধা চামচ কালোজিরার তেল ও দুই চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করার মাধ্যমে আমরা কিডনিতে পাথরের শঙ্কা থেকে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। সেইসাথে একটি সুষম খাদ্যাভাস তৈরি করাটাও জরুরি।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কালোজিরা নারী ও পুরুষ দুজনেরই জন্যই উপকারী। নিয়মিত এক চিমটা কালোজিরা খাওয়ার ফলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এতে করে পুরুষের পুরুষত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ব্রণ দূর করতেঃ এক চামচ কালোজিরার তেলের সাথে এক চামচ মধু অর্থাৎ আপনি যে পরিমান কালোজিরার তেল নিবেন সেই পরিমান মধু মিশাতে হবে। এরপর ব্রণের জায়গাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে এটি সারারাত লাগিয়েও রাখতে পারবেন। এই নিয়মে নিয়মিত ব্যাবহারে ব্রণের সমস্যা দূর হয়।
চুলপড়া কমাতেঃ চুলপড়া কমাতে কালোজিরার তেল বেশ কার্যকরী একটি জিনিস। নিয়মিত এর ব্যাবহারে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি ফলাফল লক্ষ্য করতে পারবেন।
রসুন ও কালোজিরার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যেই কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কারণ এই আর্টিকেলের উপরের অংশে কালোজিরার বিভিন্ন উপকারিতা সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলের উপরের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ করা হলো।
আমাদের দৈনন্দিন খাবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো রসুন। বিশেষ করে রান্নার কাজে আমরা সবচেয়ে বেশী ব্যাবহার করে থাকি। রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এর রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণাগুন। আর্টিকেলের এই অংশে রসুন এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন রসুন এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিচে রসুন এর কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হার্টের সমস্যা প্রশমনে
- কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এছাড়াও রসুনের রয়েছে বিশেষ কিছু ঔষধি গুণাগুন। রসুনের এসব ঔষধি গুন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা
মৃত্যু ব্যাতীত সকল রোগের মহৌষধ হলো কালোজিরা। মূলত কালোজিরা খাওয়ার কোনোই অপকারিতা নেই। কিন্তু যখন কেউ পরিমানের তুলনায় অতিরিক্ত কালোজিরা খাবে বা সেবন করবে তখন কালোজিরারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে কালোজিরার যেসকল অপকারিতা দেখা দেয় সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন করার ফলে এটি আপনার শরীরে যে রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
- ডায়বেটিস এর রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা খাওয়া উচিতে। কারণ, অতিরিক্ত পরিমান কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের শর্করার পরিমান কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরার তেল ত্বকে লাগানোর ফলে আমাদের শরীরে এলার্জির দেখা দিতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে ত্বকের প্রদাহ, পাকস্থলির প্রদাহ, বুক জ্বালা করার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ অতরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের অকাল গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
পরামর্শ
মূলত কালোজিরা খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নাই। কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু আমাদেরকে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা কি পরিমাণ কালোজিরা খাচ্ছি। কারণ সঠিক পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা প্রায় অসমভব।
আর্টিকেলটিতে কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি কালোজিরা তেলের উপকারিতা, রসুন ও কালোজিরার উপকারিতা ও অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে কালোজিরা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলট সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত ব্যাক্তিদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url