ল্যাকটোজেন ১ বানানোর ও খাওয়ার নিয়ম

একটি শিশুর জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার হলো তার মায়ের দুধ। মায়ের দুধের ঘাটতি পূরণ করার জন্যই শিশুদের এর বিকল্প খাবার হিসেবে বিভিন্ন ধরণের পাউডার বা গুড়া দুধ খাওয়ানো হয়। বাজারে শিশুদের খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের পাউডার বা গুড়া দুধ পাওয়া যায়।
ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স ও বানানোর নিয়ম
মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে শিশুদেরকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা এই ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স ও বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটিতে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স, ল্যাকটোজেন ১ বানানোর নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

ল্যাকটোজেন ১ এর উপকারিতা

পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্ররত্যেকটি শিশুর জন্য সবচেয়ে উত্তম খাবার হলো তার মায়ের দুধ। একটি শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য তার মায়ের বুকের দুধের বিকল্প কোনো খাবার নেই। কিন্তু বিভিন্ন কারণবশত নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়ে উঠে না।

যখন কোনো নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয় না তখন তাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো হয়। নবজাতক তার মায়ের বুকের দুধ খেতে না পারার সমস্যাটি প্রায় ঘটে থাকে। এজন্য প্রায় সব ডাক্তারই নবজাতককে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।


ল্যাকটোজেন ১ এ এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শিশুর জন্য মায়ের দুধের পুষ্টির সমতুল্য। ল্যাকটোজেন ১ এ বিদ্যমান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান শিশুর জন্য অত্যন্ত জরুরি। একটি নবজাতককে ল্যাকটোজেন ১ এক খাওয়ানোর ফলে শিশুর দেহে রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায় ও রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হয়।

ল্যাকটোজেন ১ এ থাকা ক্যালসিয়াম শিশুর শরীরের হাড়ের গঠন মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে। এই দুধ শিশুর জন্য শিশুর মায়ের বুকের দুধের সহরিমান পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সক্ষম। এতে করে একটি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকে। একটি শিশুর জন্য ল্যাকটোজেন ১ এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি ওকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।

ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স

একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর যখন সে তার মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে না তখন তাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো হয়। একেবারে নবজাতক অর্থাৎ যেসব শিশুর বয়স শূন্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত তাদের কে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়াতে হবে। একটি শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাকে ল্যাকটোজেন ১ আর নিয়মও পরিবর্তন হবে।

কারণ ছোট থাকতে একটি শিশুর যে সকল পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় সে সব পুষ্টি উপাদানের পরবর্তীতে প্রয়োজন হয় না বা প্রয়োজনের পরিবর্তন হয়। তখন তাকে ল্যাকটোজেন ১ এর পরিবর্তে অন্যান্য যেসব দুধ আছে সেগুলো খাওয়াতে হবে।

ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার নিয়ম

শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়মও পরিবর্তন হতে থাকবে। শূণ্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো উচিত। এর চেয়ে বেশী বয়সের বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো উচিত নয়। বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক।
  • বাচ্চার বয়স যখন এক থেকে দুই সপ্তাহ হবে তখন ৯০ মিলির ফিডারে তিন চামচ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে প্রতিদিন ছয়বার করে খাওয়াতে হবে। উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে বেশি কখনোই খাওয়াবেন না। এতে করে শিশুর সমস্যা হতে পারে।

  • শিশুর বয়স যখন তিন থেকে চার সপ্তাহ হবে তখন চার চামচ ল্যাকটোজেন ১ ১২০ মিলি পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার খাওয়াতে হবে।

    আরও পড়ুনঃঃ বন্ধ নাক খোলার ঘরোয়া উপায়সমূহ

  • বাচ্চার বয়স যখন আরেকটু বেশি হবে অর্থাৎ দুই মাস বয়স হলে বাচ্চার খাবারের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে তাকে ৫ চামচ ল্যাক্টোজেন ১ ১২০ মিলি ফিডারে মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার খাওয়াবেন।

  • তারপর শিশুর বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হবে তখন তাকে ১৮০ মিলির ফিডারে ছয় চামচ পরিমাণ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে রাত এবং দিন মিলিয়ে পাঁচবার খাওয়াবেন।

  • আপনার বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস চলমান থাকবে অর্থাৎ ছয় মাস হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে 220 মিনিট ফেডারে সাত চামচ ল্যাকটোজেন ১ এক মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার করে খাওয়াবেন।

মূলত এটি হলো ৬ মাস পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়ম। তবে সকল প্রকার ওষুধ বা দুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ানো উচিত। বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর সময় খুব সর্তকতা অবলম্বন করবেন। অন্যথায় বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

ল্যাকটোজেন ১ বানানোর নিয়ম

শিশুকে খাওয়ানোর জন্য যেসব ঔষধ বা পাউডার বা গুঁড়া দুধ তৈরি করা হয় সেগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সহিত তৈরি করা উচিত। কারণ একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়। খুব অল্পতেই এরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে খাওয়ানোর জন্য চেয়ে দুধটা আমরা তৈরি করব সেটা খুবই সতর্কতার সাথে তৈরি করব।


আপনার বাচ্চার জন্য দুধ তৈরি করার জন্য যে ফিডারটি ব্যবহার করবেন প্রথমেই সেই ফিডারটিকে গরম পানিতে ধুয়ে নিবেন। এতে করে ফিডারটি সম্পূর্ণভাবে জীবাণু মুক্ত হয়ে যাবে। আপনি আপনার বাচ্চাকে যে ফিডার ব্যবহার করে দুধ খাওয়াবেন ফিডারটি অবশ্যই একটি ভালো কোম্পানির ও ভালো মানের হয় এটা নিশ্চিত করবেন। কারণ সস্তা কোন ফিডার ব্যবহার করে আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে পরবর্তীতে বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা বা অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রথমেই বাচ্চাকে যে পরিমাণ দুধ খাওয়াবেন সেই পরিমাণ পানি গরম করে নিবেন। বাচ্চার জন্য গরম করা পানি কিছুক্ষণ রেখে দিন এবং বাচ্চার খাওয়ার উপযোগী পরিমাণ ঠান্ডা হলে এটি ব্যবহার করুন। এক সপ্তাহের বাচ্চার জন্য ৯০ মিলি পানিতে তিন চামচ ল্যাক্টোজেন ১ এক মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। বাচ্চার বয়স যদি তিন থেকে চার সপ্তাহ হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের ১২০ মিলিয়ে পানিতে ৪ চামচ ল্যাক্টোজেন ১ মেশাতে হবে।

বাচ্চার বয়স দুই মাস হলে 150 মিলির ফিডারে ৫ চামচ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আবার বাচ্চার বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হবে তখন তাকে ১৮০ মিলি পানিতে ছয় চামচ পরিমাণ ল্যাক্টোজেন ১ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

আপনার বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস চলমান থাকবে তখন তাকে ২১০ মিলি পরিমাণ পানিতে সাত চামচ ল্যাক্টোজেন ১ এক মিশিয়ে খাওয়াবেন। আপনার বাচ্চার জন্য দুধ তৈরি করার সময় পানির পরিমাণটি খুব ভালোভাবে খেয়াল করবেন। পানির পরিমাণ যেন কমবেশি না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ও দুধ নেওয়ার পর এটিকে ভালোভাবে মেশাতে হবে। যাতে করে এর ভেতরে কোন প্রকার গুড়া গুড়া ভাব না থাকে। অন্যথায় শিশুর এটি কে পান করতে অসুবিধা হবে। এমনকি শিশুর গলায় দুধ বেধে যেতে পারে।

ল্যাকটোজেন ১ দাম কত

পরিমাণের উপর নির্ভর করে ল্যাকটোজেন ১ এর দামের তারতম্য দেখা যায়। বাংলাদেশে তিন ধরণের পরিমাণের প্যাকেট বা কৌটা পাওয়া যায়। দেশের সব অঞ্চলেই এবং সবসময়ই এর দাম একই হয়ে থাকে। তারপরেও কেনার আগে আপনি অবশই এর গায়ে লেখা দাম দেখে কিনবেন। নিচে ল্যাকটোজেন ১ এর দাম দেওয়া হলোঃ
  1. ১৮০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ২৫০ টাকা।
  2. ৩৫০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ৬৫০ টাকা।
  3. ৪০০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ৮৫০ টাকা।
আপনার বাচ্চার জন্য আপনি যেসব ঔষধ বা পণ্যসামগ্রী কিনবেন সেগুলো কেনার আগে আবশ্যই সেই জিনিসের উৎপাদনের তারিখ ও এর মেয়াদ উর্ত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিবেন।

ল্যাকটোজেন ১ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক যখন কোন কারণবশত তার মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে না তখন তাকে এই ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো হয়। যেহেতু এটি মায়ের বুকের দুধের বিকল্প হিসেবে শিশুকে খাওয়ানো হয় তাই এটি খাওয়ানোর যে সঠিক নিয়ম কানুন রয়েছে সেগুলো না মেনে নদী বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো হয় তাহলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।


যেমন শিশুর হজমজনিত সমস্যা, পাতলা পায়খানা হওয়া, বমি হওয়া বা শিশুকে শান্ত করতে না পারা ও এরকম কিছু সমস্যা দেখা দিবে। তাই আপনার বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই এটি খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন। আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে সঠিক নিয়মে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ান তাহলে এটি অবশ্যই আপনার শিশুর শরীরের জন্য উপকারী হবে। অন্যথায় এটি আপনার শিশুর অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

লেখকের মন্তব্য

আপনার বাচ্চা যদি একেবারেই তার মায়ের বুকের দুধ খেতে না পারে তবেই তাকে ল্যাকটোজেন ১ দুধ খাওয়াবেন। অন্যথায় এটি খাওয়ানো একদমই উচিত হবে না। ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

এই আর্টিকেলটিতে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়ম, বয়স, উপকারিতা ও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন তথ্য বা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে না পরিচিত ব্যক্তির কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url