মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম ও ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক, আপনি কি আপনার মুখের মেছতার জন্য চিন্তিত? মুখের মেছতা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটিতে মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম ও মেছতা দূর করার বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এছাড়াও আর্টিকেলটিতে মেছতা দূর করার ঔষধ, মেছতা দূর করার ফেসওয়াস সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন।
মেছতা কি
আমাদের ত্বকের একটি পিগমেন্টেশন ডিসঅর্ডার। যার ফলে আমাদের গালে এবং মুখে হালকা বা গাড়ো বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয়। এতে করে আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। এটি মূলত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরনের ফলে হয়ে থাকে।
মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম
আমাদের ত্বকে মেছতা হওয়ার ফলে আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে আমাদেরকে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। মেছতা দূর করার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিচে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কতগুলো মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম উল্লেখ করা হলো
- Melatrin Cream
- Melasma Cream
- Melanyc
- Mela Care Cream
- Betavet-N Cream
- Hydroo 2%
- Hydroquinone Cream
মেছতা দূর করার ফেসওয়াস
মূলত মেছতা দূর করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফেসওয়াস নেই। যেগুলা ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার মেছতার সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। বাজারে সাধারণত যেসব ফেসওয়াসগুলো পাওয়া যায় সেগুলো যেসব উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় তা আপনার ত্বকের উপরিভাগের ময়লা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
আরও পড়ুনঃঃ হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
আপনার ত্বকের ময়লা দূর করার জন্য আপনি যে ফেসওয়াসটি কিনে ব্যাবহার করতে চাচ্ছেন সেটি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই এর উপকরণ সম্পর্কে ভালো করে দেখে নিবেন। বিশেষ করে আপনি যে ফেসওয়াশটি নিতে যাচ্ছেন সেটিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষার না থাকে। ফেসওয়াসটিতে যদি ক্ষারের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে এটি আপনার ত্বকের মেছতা দূর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার পরিবর্তে বাড়িয়ে দিতে পারে।
মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মুখের মেছতা দূর করার জন্য সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি হলো ঘরোয়া পদ্ধতি। ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি খুব অল্প খরচেই আপনার ত্বকের মেছতা খুব সহজেই দূর করতে পারবেন। তাছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেছতা দূর করার অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেছতা দূর করার জন্য আপনাকে কোনো ডাক্তারের পরামর্শ করার প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমেই আপনি মেছতা দূর করতে পারবেন। তাহলে চলুন মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লেবুঃ আপনি হয়তো জানেন যে লেবুর রস ব্যাবহার করে রূপচর্চা করা যায়। লেবুর রস ত্বকের মেছতা দূর করার জন্যও বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। লেবুর রসের সাথে বেসন ও পরিমাণ্মতো গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট আপনার ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। এই নিয়মে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ব্যাবহার করতে থাকুন। এতে করে আপনার ত্বকের মেছতা দূর হতে থাকবে।
মধুঃ মধু আমাদের মানবসমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি নিয়ামক। পবিত্র কুরআন মাজীদে বলা আছে "মৃত্যু ব্যাতীত সকল রোগের মহৌষধ হলো মধু"। ত্বকের মেছতা দূর করার ক্ষেত্রেও আপনি মধুর ব্যাবহার করতে পারেন। মধুর সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যাবহার করলে মুখের মেছতা দূর হয়।
হলুদঃ রান্নার কাজে হলুদের ব্যাবহার আমরা সকলেই করে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার মুখের মেছতা দূর করার ক্ষেত্রেও এই হলুদ কাজে আসবে। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর গুন। যা আমাদের মুখের মেছতা দূর করার কাজে ব্যাবহার করা যেতে পারে। হলুদ ব্যাবহার করে মুখের মেছতা দূর করার জন্য প্রথমে কাচা হলুদ ভালোভাবে বেটে বা ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন দিনের বেলা কখনোই মুখে হলুদ ব্যাবহার করবেন না। অন্যথায় আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এরপর হলুদের পেস্ট ত্বকের যেখানে মেছতা রয়েছে সেখা ২০ মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যাবহার করার পর আপনি নিজেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
গরুর দুধঃ গরুর দুধে যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এই গরুর দুধ ব্যবহার করে আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে পারি তা সকলের হয়তো জানা নেই। গরুর দুধের সাথে পরিমাণমতো আটা বা ময়দা ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে পেস্টটি ২০ মিনিটের মত ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে দেখবেন আপনার ত্বকের মেছতা ভালো হয়ে যাচ্ছে।
পাকা পেপেঃ পাকা পেঁপে খেতে আমরা সবাই ভালোবাসি। এই পাকা পেঁপে ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বকের মেছতা দূর করা সম্ভব। পেতে থাকা ভিটামিন ই আপনার ত্বকের মেছতা দূর করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে থাকে। এজন্য প্রথমেই পাকা পেঁপে টিকে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর দুই চামচ পেঁপের সাথে এক চামচ লেবুর রস এই নিয়মে পরিমাণ মতো পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর তা আপনার মুখে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এই নিয়মে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করলে আপনার মুখের মেছতা দূর হবে।
আলুঃ আলুর রস আমাদের চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই আলুর রস ব্যাবহারে আপনার ত্বকের মেছতার দাগও দূর করা সম্ভব। এজন্য প্রতিদিন ২০ মিনিট আলুর পেস্ট লাগাতে হবে। দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি এর ফলাফল পেয়ে যাবেন।
টক দইঃ রুপচর্চার জন্য টক দই বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। টক দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া সরাসরি আমাদের ত্বকের নিচে প্রবেশ করে আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে থাকে। তাই আপনার ত্বকের মেছতার দূর ত্যাগ করার জন্য আপনি টক দই ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য তিন চামচ টক দই নিয়ে তা ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর এর সাথে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে যে জায়গায় মেছতার দাগ রয়েছে সেই জায়গাতে লাগিয়ে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মেছতার দাগ ক্রমশ কমতে থাকবে।
মুলতানি মাটিঃ আমরা অনেকেই মুলতানি মাটিকে ফেসিয়াল প্যাক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে আমাদের তো ভালো ভাবে পরিষ্কার হয়। মেছতার দাগ দূর করার করার জন্য মুলতানি মাটি ব্যবহার করা যায়। এজন্য এক চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে হাত চামচ মধু এবং গোলাপজল ভালো হবেই মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ত্বকের যে জায়গাতে মেছতার দাগ রয়েছে সেখানে সেই মুলতানি মাটির প্যাক ১৫ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন যখন আপনি একটা টানটান ভাব অনুভব করবেন তখন কোন কথা বলা যাবে না। তা না হলে আপনার ত কুচকে যেতে পারে। সবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখমন্ডল পরিষ্কার করে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যাবহারে আপনি সুফল পাবেন।
টমেটোঃ মেছতা দূর করার ক্ষেত্রে টমেটো সবচেয়ে বেশী কার্যকরী। টমেটোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের মেছতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। চার চামচ টমেটোর রসের সাথে হাফ চামচ আটা ব ময়দা ও হাফ চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে তা মুখের যে স্থানে মেছতার দাগ রয়েছে সেখানে ব্যাবহার করতে হবে। এভাবে ২ থেকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে টমেটো ব্যাবহারে খুব দ্রুততার সাথে ত্বকের মেছতার দাগ দূর করা সম্ভব।
শসাঃ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আমরা শসা ব্যাবহার করে থাকি। সেই দরুন ওয়কের মেছতার দার দূরীকরণেও শসার কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। ব্লেন্ড করা ২ চামচ শসার সাথে এক চামচ বেসন ও এক চামচ গোলাপজল মিশিয়ে যে স্থানে মেছতার দাগ আছে সেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যাবহারের ফলে মেছতার দাগ দূর করা সম্ভব।
মেছতা দূর করার সিরাম
মেছতার দাগ নিয়ে চিন্তিত থাকে না এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে মেছতা বা মেলাজমা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের মাঝে এই মেছতার দাগের সমস্যাটি ব্যাপক হারে হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির পর, হরমনের তারতম্য ও অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারনে এটি দেখা দেয়।
পূর্বের তুলনায় বর্তমানে মেছতা দূর করার জন্য নতুন নতুন আধুনিক প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। এই আর্টিকেলের উপরের অংশে মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম ও মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আর্টিকেলের এই অংশে মেছতা দূর করার সিরাম সম্পর্কে জানবো। নিচে মেছতা দূর করা সিরামের না উল্লেখ করা হলোঃ
- নিয়াসিনামাইড
- আলফা আরবুটিন
- হাইড্রোকুইনন
- ভিটামিন সি
- কজিক অ্যাসিড
- রেটিনল
- হোয়াইট রাইস সিরাম
- মেলাসমা ব্রেকডাউন সিরাম
লেখকের মন্তব্য
মেছতার দাগ নিয়ে আমরা সকলেই চিন্তিত থাকি। কারণ এই মেছতার দাগ আমাদের মুখের সৌন্দর্যকে একদম নষ্ট করে দেয়। এজন্য প্রায়ই আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। আর্টিকেলটিতে মেছতার দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় ও বিভিন্ন ক্রিম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং তাদেরকেও মেছতা দূর করার ক্রিম ও বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে সহায়তা করুন। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন তথ্য বা মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url