মশার কয়েল কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি
আমরা সবাই বাসা বাড়িতে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশার কয়েল ব্যাবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই মশার কয়েল কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। মশার কয়েল তৈরির উপাদান সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে মশার কয়েল তৈরির উপাদান সহ মশার কয়েলের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে সবচেয়ে ভালো মশার কয়েল সম্পর্কেও বলা হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ করছি।
মশার কয়েল কে আবিষ্কার করেন
মশার কয়েল দেখেননি বা ব্যাবহার করেননি এরকম মানুষ পাওয়া অসম্ভব। তবে এই মশার কয়েল কে আবিষ্কার করেছেন তা সম্পর্কে সবার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অতি সহজ ধারণ থেকেই মূলত কয়েলের আবিষ্কার হয়। Eiichiro Ueyama নামক একজন জাপানী ব্যাবসায়ী কয়েলের আবিষ্কার করেন।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ ও পারস্যে মশা তাড়ানোর জন্য পাইরেথ্রাম নামক কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। পাইরেথ্রাম হলো কৃষি কাজে ব্যবহার করার একটি কীটনাশক। Eiichiro Ueyama এই পদ্ধতি দেখে অনুপ্রানীত হয়ে চালের সাথে পাইরেথ্রামের গুড়া মিশিয়ে পোড়ানো শুরু করেন এবং দেখেন যে এর থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তার ফলে মশা চলে যাচ্ছে। সেই থেকে তিনি ব্যাবসায়ীক একটা আইডিয়া পেলেন।
প্রথম অবস্থায় তিনি ম্যান্ডারিন, স্টার্চ পাউডার এবং পাইরেথ্রামের গুড়া মিশিয়ে এক ধরণের ধূপের কাঠি তৈরি করেন। ধূপের কাঠিগুলো আগুন জ্বালানোর পর এটি প্রায় ৩৫-৪০ মিনিটের মতো জ্বলছিলো। পরবর্তীতে ১৮২০ সালের দিকে Eiichiro Ueyama মশা তাড়ানোর উপকরণ হিসেবে এই ধূপের কাঠিগুলোকে বাজারজাত করা শুরু করেন।
এরপর ধীরে ধীরে এটি কীভাবে আরো বেশীক্ষণ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়। এরপর ১৯০২ সালে কাঠিটিকে সাপের মতো মোড়ানোর পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। তারপর থেকেই এটি এভাবেই বাজারজাত হয়ে আসছে। এই হলো মশার কয়েল আবিষ্কারের ইতিহাস।
মশার কয়েলের মূল উপাদান কি
বর্তমান সময়ে মশার কয়েল চেনে না বা ব্যাবহার করেনি এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না। কারণ মশার কয়েলের ব্যাবহার আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে মশার উপদ্রব একটু বেশীই। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে মশার উপদ্রব অনেক বেশী। মশার কয়েল তৈরিতে যে রাসায়নিক ব্যাবহার করা হয় তা হলো পাইরোফ্রয়েড।
মশার কয়েল ব্যাবহার করে থাকলেও আমরা অনেকেই মশার কয়েলের মূল উপাদান সম্পর্কে জানি না। মশার কয়েলের মূল উপাদান হলো পাইরেথ্রাম। পাইরেথ্রাম হলো একটা প্রাকৃতিক উপাদান। এটি মূলত এক ধরণে গাছের গুড়া যা ক্রাইস্যান্থেমাম নামে পরিচিত। এই গাছের আরেকটি নাম হলো টেনাসিটাম। মশার কয়েল তৈরি করার মূল উপাদান হিসেবে ব্যাবহৃত এই পাইরেথ্রাম ক্রাইস্যান্থেমাম নামক গাছের গুড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়।
মশার কয়েল তৈরির উপাদান
বাসা-বাড়িতে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে আমরা সকলেই মশার কয়েল ব্যাবহার করে থাকি। মশার কয়েল আমরা সকলেই ব্যাবহার করে থাকলেই আমরা অনেকে আছি যারা কয়েল তৈরির উপাদানসমূহ সম্পর্কে জানি না। আর্টিকেলের এই অংশে মশার কয়েল তৈরির বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে একটি মশার কয়েল কিভাবে কাজ করে। মূলত এটি ধোঁয়া তৈরি করার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। মশার কয়েল তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। মশার কয়েল তৈরির উপাদান হিসেবে যেসব রাসায়ানিক উপাদান ব্যাবহার করা হয় সেগুলো হলোঃ
- পাইরেথ্রাম
- পাইরেথ্রিনস
- অ্যালেথ্রিন
- এসবিথোথ্রিন
- ম্যাপফ্লুথ্রিন
- ডাইমফ্লুথ্রিন
- পাইপারনিল বাটক্সাইড (পিবিও)
- বিএইচটি (বাটলেটেড হাইড্রোক্সিটোলিউইন)
- এমজিকে ২৬৪ এন (অক্টাইল সাইক্লোহপটিন ডিকারবক্সিমাইড)
মশার কয়েল খেলে কি মানুষ মারা যায়
মশার কয়েল তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যেগুলো পোড়ানোর ফলে এর থেকে ধোয়া নির্গত হয়। যার ফলে মশা দূরে চলে যায় এমনকি মারাও যায়। যেহেতু মশার কয়েল তৈরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- পাইরেথ্রাম, পাইরেথ্রিনস, অ্যালেথ্রিন, এসবিথোথ্রিন, ম্যাপফ্লুথ্রিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
এসব পদার্থ মানবদেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই বলা যায় যে মশার কয়েল খেলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মশার কয়েল খাওয়ার ফলে মানুষ এর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
মশার কয়েলের ধোঁয়া কতটা ক্ষতিকর
মশার কামড়ে আমাদের বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারি। মশা কামড়ানোর ফলে ডেঙ্গু, বার্মা ফরেস্ট ফিভার, ম্যালেরিয়া, টুলারোমিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস এর মতো বিভিন্ন ধরণের রোগ এই মশা কামড়ানোর ফলে হয়ে থাকে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা যে মশার কয়েলটি ব্যাবহার করে থাকি সেটি ব্যাবহার করার ফলেও আমাদের বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে।
মশার কয়েলের ধোঁয়া কতটা ক্ষতিকর বা মশার কয়েল ব্যাবহারে আমাদের কি কি রোগ হতে পারে তা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বর্তমানে বাজারে যেসব কয়েল পাওয়া যায় সেগুলোতে নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় বেশী পরিমাণ রাসায়ণিক ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। মশার কয়েলের ধোয়ার সাথে এতে ব্যাবহৃত বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আমাদের নাকে মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে আমাদের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের জন্য মশার কয়েলের ধোঁয়া বেশ ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষনা থেকে জানা যায় যে, একটি মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হয় তা ১০০ টি সিগারেটের ধোয়ার সমান। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে মশার কয়েলের ধোঁয়া কতটা ক্ষতিকর। মশার কয়েলের ধোঁয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো হলো- শ্বাসকষ্টের সমস্যা, সেন্সিটিভ স্কিনের সমস্যা, অ্যালার্জি, র্যাস, চুলকানি, লালভাব, মাইগ্রেনের সমস্যা, মাথাব্যাথা, বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা। তাই আমাদের সকলেরই উচিত যতটা সম্ভব কয়েল ব্যাবহার থেকে বিরত থাকা।
সবচেয়ে ভালো মশার কয়েল কোনটি
মশার কয়েল মানেই ক্ষতি। কারণ একটি মশার কয়েল থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয় তা মানব্দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে মশার কয়েলে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যাবহার করা হয়ে সেগুলো যদি নির্ধারিত মাত্রায় ব্যাবহার করে মশার কয়েলটি তৈরি করা হয় এতে করে এর ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।
বিএসটিআই অনুমোদিত মশার কয়েলের ব্র্যান্ডের কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- এসিআই সুপার প্লাস
- গুড নাইট
- ব্ল্যাক ফাইটার
- এক্সট্রিম
- ঈগল সুপারআরও পড়ুনঃঃ বন্ধ নাক খোলার ঘরোয়া উপায়সমূহ
- ফিনিস
- ফিনিস নিউ সুপার
- স্টপ জাম্বু
- নাইট রোজ
মশার কয়েল দাম
বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন দামের ও ব্র্যান্ডের মশার কয়েল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বাজারে সরকার অনুমোদিত ছাড়াও আরো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মশার কয়েল পাওয়া যায়। এজন্য বাংলাদেশের বাজারের মশার কয়েল এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। মশার কয়েলের দাম সাধারণত প্যাকেট প্রতি ১০০ থেকে শুরু করে ৫০০/৫৫০ টাকা হয়ে থাকে। মশার কয়েলের দাম সঠিকভাবে জানার জন্য আপনাকে সরাসরি দোকানে গিয়ে ক্রয় করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
মশার কামড়ে যেসব মরণব্যাধি রোগ হয়ে থাকে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা মশার কয়েল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই মশার কয়েল থেকে উপকারের পাশাপাশি এটি আমাদের অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশার কয়েলের বিকল্প কোন পদ্ধতি যেমন মশারি ব্যবহার করা।
প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটিতে মশার কয়েল আবিষ্কারের ইতিহাস, মশার কয়েলের বিভিন্ন উপাদান ও মশার কয়েলের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন তথ্য বা মতামত জানাতে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত মানুষের কাছে শেয়ার করুন এবং তাদের কেউ মশার কয়েলের এই বিস্ময়কর তথ্য জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url