প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম ও প্রাইমা ১ খাওয়ার উপযুক্ত বয়স

বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য ডাক্তার প্রাইমা ১ এর পরামর্শ দিয়েছে কিন্তু কিভাবে শিশুকে প্রাইমা ১ খাওয়াতে হয়ে তা জানা নেই? কোনো সমস্যা নেই আপনি একদম সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। এই আর্টিকেলটিতে প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম ও বয়স
এছাড়াও আর্টিকেলটিতে প্রাইমা ১ খাওয়ার বয়স, বানানোর নিয়ম, প্রাইমা ১ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও এর দাম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সতর্কতাঃ নবজাতকের জন্য যেকোনো জিনিস ব্যাবহারের পূর্বে অবশ্যই সম্পূর্ণ এবং সঠিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত। কারণ ছোট একটি ভুলের কারণে আপনার শিশুর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

প্রাইমা ১ খাওয়ার বয়স

প্রত্যেকটি শিশুর জন্য তার মায়ের বুকের দুধ হলো সর্বোত্তম খাবার। একটি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার জন্য তার মায়ের বুকের দুধই শ্রেষ্ঠ খাবার। কিন্তু বিভিন্ন কারণবশত শিশু তার মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে না। তখন তার মায়ের বুকের দুধের বিকল্প হিসেবে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরণের কৌটা দুধ খাওয়ানো হয়।


সাধারণত যেসকল নবজাতকের বয়স শূণ্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হয় তাদেরকে প্রাইমা ১ খাওয়ানো হয়। শূণ্য থেকে ছয় মাস বয়সী নবজাতকের দৈহিক চাহিদা মেটাতে যেসকল পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন সেই সকল পুষ্টি উপাদান দিয়ে প্রাইমা ১ তৈরি করা হয়।

প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম

আমরা ইতিমধ্যেই প্রাইমা ১ খাওয়ার বয়স সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাহলে চলুন এবার প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রাইমা ১ বানানোর জন্য প্রথমেই যে পাত্রে বা ফিডারের সাহায্যে নবজাতককে দুধ খাওয়াবেন সেটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ফিডার পরিষ্কার করার জন্য প্রতিবার গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে করে ফিডারটি সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। এরপর বাচ্চার বয়স অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ প্রাইমা ১ ও কুসুম গরম পানি নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। কত চামচ প্রাইমা ১ ও কি পরিমাণ পানি নিতে হবে তা জানতে নিম্নোক্ত পয়েন্টগুলো ভালোভাবে দেখুন।

আরও পড়ুনঃঃ ল্যাকটোজেন ১ বানানোর ও খাওয়ার নিয়ম
  • শূণ্য থেকে দুই সপ্তাহ বয়সের শিশুর জন্য ৯০ মিলি পানিতে ৩ চামচ প্রাইমা ১ মিশাতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ৩ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ চলমান থাকবে তখন ১২০ মিলি পানিতে ৪ চামচ প্রাইমা ১ মিশাতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ২ মাস চলমান থাকার সময় ৫ চামচ প্রাইমা ১ মিশাতে হবে ১৫০ মিলি পানিতে।
  • তৃতীয় ও চতুর্থ মাসের সময় ১৮০ মিলি পানিতে ৬ চামচ প্রাইমা ১ দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স যখন ৫-৬ মাস চলমান থাকবে তখন ২১০ মিলি পানিতে ৭ চামচ প্রাইমা ১ দুধ মিশাতে হবে।
বাচ্চার জন্য প্রাইমা ১ বানানোর জন্য প্যাকেটের মধ্যে দেওয়া চামচ ব্যাবহার করবেন। অন্যথায় দুধের পরিমানের তারতম্য হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার জন্য দুধ বানানোর জন্য যে পানি ব্যাবহার করবেন তা অবশ্যই বাচ্চার জন্য সহনীয় মাত্রার গরম হতে হবে। বাচ্চাকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই পানির তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে নিবেন।

বাচ্চার জন্য দুধ বানানোর সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন যেন কোনো গুড়া গুড়া ভাব না থাকে। ভালোভাবে দুধ মিশানোর জন্য একটি চামচ ব্যাবহার করুন অথবা ভালোভাবে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে মিশিয়ে নিন।

প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম

কোনো বাচ্চা যখন কোনো কারণবশত তার মায়ের দুধ খেতে পারে না তখন তাকে তার প্রয়জনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাইমা ১ খাওয়ানো হয়। আমরা এতক্ষণ প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো।


বাচ্চাকে প্রাইমা ১ খাওয়ানোর পূর্বে আপনাকে অবশ্যই প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলের উপরের অংশে প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। উল্লেখিত নিয়ম মেনে দুধ বানানোর পর নিচে দেওয়া প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন।
  • শূণ্য থেকে ১৫ দিন বয়স পর্যন্ত দিনে ৬ বার করে খাওয়াতে হবে।
  • তৃতীয় সপ্তাহ এবং চতুর্থ সপ্তাহে প্রতিদিন বাচ্চাকে ৫ বার করে প্রাইমা ১ খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ২ মাস চলমান থাকার সময় ৫ বার করে খাওয়াতে হবে।
  • তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে প্রতিদিন ৫ বার করে প্রাইমা ১ দুধ খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স যখন ৫-৬ মাস চলমান থাকবে তখন তাকে ২৪ ঘন্টায় ৫ বার খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না। বাচ্চা দুধ খেতে না চাইলে তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবে না। কারণ জোরাজোরি করে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর ফলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে। শূণ্য থেকে ছয় মাস বয়সের বাচ্চার জন্য প্রাইমা ১ তৈরি করা হয়েছে। তাই এই বয়সসীমার বাইরে গিয়ে বাচ্চাকে প্রাইমা ১ খাওয়ানো একদমই উচিত নয়।

প্রাইমা ১ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন তার সবগুলো দিয়েই প্রাইমা ১ দুধ তৈরি করা হয়েছে। এ থেকে বুঝাই যাচ্ছে যে প্রাইমা ১ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে বিশেষ কারণ বশত প্রাইমা ১ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

প্রত্যেক নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে থাকে। তাই এরা খুব সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই আমাদের কে নবজাতক কে প্রাইমা ১ সহ যেকোনো দুধ বা খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাচ্চাকে পরিমাণের অধিক প্রাইমা ১ খাওয়ানো হয় সে ক্ষেত্রে বাচ্চার পাতলা পায়খানা হতে পারে।


প্রাইমা ১ বানানোর জন্য আপনি যে পানি ব্যবহার করবেন সেটি যদি বেশি গরম হয় তাহলে বাচ্চার মুখ পুড়ে যেতে পারে। এজন্য বাচ্চার জন্য যে পানি ব্যবহার করে দুধ তৈরি করবেন সেটি অবশ্যই বাচ্চাকে খাওয়ানোর পূর্বে আপনি এর তাপমাত্রা ভালোভাবে দেখে নিবেন। বাচ্চাকে যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দুধ খাওয়ান তাহলে বাচ্চা বমি করতে পারে। উল্লেখিত সমস্যা গুলো ছাড়া আর কোন সমস্যা দেখা দেয় না।

প্রাইমা ১ দাম

নবজাতককে খাওয়ানোর জন্য বেশীরভাগ ডাক্তারই প্রাইমা ১ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা প্রাইমা ১ এর দাম জানিনা। বাংলাদেশের প্রায় সকল কনফেকশনারী, মুদি দোকান কিংবা অনলাইনেও প্রাইমা ১ দুধ পাওয়া যায়। ৪০০ গ্রামের প্রাইমা ১ দুধের দাম ৭৫০ টাকা।

নবজাতকের জন্য যেকোনো ঔষধ, দুধ অথবা অন্যান্য যেকোনো কিছু কেনার আগে অবশ্যই এর গুণগত মান ও এর মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভালোভাবে দেখে যাচাই করে নিবেন। কারণ ছোট একটি ভুলের কারণে আপনার শিশুর বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আপনার শিশুকে যেকোনো ঔষধ কিংবা দুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন। এবং সেই মোতাবেক শিশুকে ঔষধ ও দুধ খাওয়াবেন। প্রাইমা ১ দুধকে বানানো হয়েছে শিশুকে মায়ের দুধের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু সঠিক নিয়মে শিশুকে প্রাইমা ১ দুধ না খাওয়ানোর ফলে এটি আপনার শিশুর জন্য ক্ষতি সাধন করবে।

প্রিয় পাঠক, আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে প্রাইমা ১ দুধ খাওয়ার বয়স, বানানোর নিয়ম, খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দাম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকেও প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url