টিউমার চেনার উপায় - টিউমার হলে করনীয়
জীববৈচিত্রের কারণে আমরা আমাদের শরীরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিবর্তন দেখতে পাই। এদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে এবং কিছু পরিবর্তন আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। তবে আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের শরীরের এসব সমস্যা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।
এই আর্টিকেলটিতে টিউমার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন, টিউমার চেনার উপায়, টিউমার কত প্রকার ও কি কি, ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ, মাথায় টিউমার চেনার উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই টিউমার সম্বন্ধে স্ববিস্তারে জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
টিউমার কি
সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের শরীর কতকগুলো কোষ দ্বারা তৈরি। যখন এই কোষগুলো অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় তখন সেই কোষকে টিউমার বলা হয়।
মানব শরীরের কোনো কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে একটি মাংসপিন্ডের আকার ধারণ করে তখন তাকে টিউমার বলা হয়। মানবদেহের জন্য এই অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া কোষের কোনই ভূমিকা নেই।
টিউমার কত প্রকার ও কি কি
টিউমার কি তা আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক টিউমার কত প্রকার ও কি কি।
টিউমার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার
- বিনাইন টিউমার
এদের মধ্যে থেকে একটি ক্যান্সারের আকার নেই এবং অপরটি ক্যান্সারের আকার নিতে পারে না।
টিউমার চেনার উপায়
আমাদের শরীর লক্ষাধিক কোষের দ্বারা তৈরি। যখন এই কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে আমরা টিউমার বলে থাকি। টিউমার দুই ধরণের হয়ে থাকে। বিনাইন টিউমার (অক্ষতিকারক) ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (ক্ষতিকারক)। চলুন এবার এই দুই ধরণেরই টিউমার চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বিনাইন টিউমারঃ বিনাইন টিউমারকে অক্ষতিকারক বলা হয়ে থাকে। এর কারণ হলো এটি শুধুমাত্র আমাদের মানবদেহের একটি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া কোষ আমাদের শরীরে ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে না। এর কারণ হলো এটি যে স্থানে বৃদ্ধি পেতে থাকে সে স্থানের আশেপাশে থাকা কোষগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে না।
বিনাইন টিউমার একটিমাত্র আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। বিনাইন টিউমার আমাদের দেহের ক্ষতি করতে পারে না কারণ অপারেশন করার মাধ্যমে এটি ভালো করা সম্ভব।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারঃ এই টিউমারটি আমাদের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। কারণ এই ধরণের টিউমারগুলো কোনো প্রকারের আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে না। এজন্য এটি অগোছালে ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই টিউমারের অনিয়ন্ত্রিত ও অগোছালো বৃদ্ধির কারণে এটি শরীরের অন্যান্য কোষ গুলোকে আক্রান্ত করে ফেলে। এটি শক্ত হয়ে থাকে ও খুব দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এই টিউমারের অন্যান্য কোষগুলোকে আক্রান্ত করা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এবং এটি ক্যান্সারের রূপ ধারণ করে। এই টিউমারটি রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যায়। যার ফলে এই টিউমারটিকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই ধরনের টিউমার গুলো প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা করানোর ফলে ভালো হয়ে যায় কিন্তু পরবর্তীতে এটি পুনরায় হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। যার ফলে একটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন হয়।
স্তন টিউমারের লক্ষণ কি কি?
ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায় হলো ব্রেস্ট টিউমার। তাই আমাদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর হার অনেক বেশী এর মূল কারণ হলো প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। স্তন টিউমারের লক্ষণ হিসেবে সবচেয়ে বেশী যে সমস্যাটি পরিলক্ষিত হয় সেটা হলো প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করা। স্তন বা ব্রেস্ট টিউমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ব্রেস্ট টিউমার কি
মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গের কোষের ন্যায় ব্রেস্ট বা স্তনের কোষের মধ্যেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার ফলে একপর্যায়ে গিয়ে এটি মাংসের পিন্ডের বা চাকার মতো রুপ নেয়। মূলত একেই ব্রেস্ট/স্তন টিউমার বলে।
ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ
ব্রেস্ট টিউমারের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যেসব লক্ষণ গুলো দেখা দেয় সেগুলোর মধ্যে স্তনের নিপলে অস্বাভাবিকতা যেমন- কালো হয়ে যাওয়া, ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। স্তনের নির্দিষ্ট স্থান চুলকানি দেখা দেয়। টিউমারের অংশের রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, স্তনে ব্যাথ্যা অনুভব করা, নিপলে ঘা হওয়া, স্তন অধিক হারে চুলকানোর মতো বিভিন্ন ধরণের অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিতে থাকে।
আরও পড়ুনঃঃ হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
আর ব্রেস্ট টিউমারের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো স্তন পিন্ডের মতো শক্ত হওয়া ও প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করা। ব্রেস্ট টিউমারের ক্ষেত্রে রোগী নিজেই এসব অস্বাভাবিকতা আন্দাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ গাইনী ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সেই মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
মাথায় টিউমার চেনার উপায়
আমাদের মানবদেহে অন্যান্য অংশে যেভাবে টিউমার হলে বাহির থেকে বোঝা যায় মাথায় টিউমার হলে তা ভাই থেকে বোঝার কোন উপায় থাকে না। এজন্য ব্রেন টিউমার বা মাথায় টিউমার হলে তা নির্ণয় করার জন্য এমআরআই করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে সিটি স্ক্যান করারও প্রয়োজন পড়ে থাকে।
তবে প্রাথমিকভাবে আমরা আমাদের শরীরের কিছু লক্ষণ সমূহ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে একটা আন্দাজ করতে পারি যে আমাদের মাথায় টিউমার হয়েছে। পরবর্তীতে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে পারি। তাহলে চলুন আমাদের মাথায় টিউমার চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- মাথা ব্যাথা হওয়া (তবে সব মাথা ব্যথা টিউমারের কারণ নয়)।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
- সাধারণভাবে প্রতিদিনভোরবেলা থেকে মাথাব্যাথা শুরু হওয়া।
- শরীরের যেকোনো স্থান হতে খিচুনি শুরু হওয়া।
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
আরও পড়ুনঃঃ মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় - রোগীর আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা।
- মাথার যে পাশে টিউমার হয় তার উল্টা পাশে প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া।
- শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া।
- শরীরের ভারসাম্য কমে যাওয়া, যার ফলে রোগী হাটতে গিয়ে পড়ে যায়।
- ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
- টিউমারের আকার বেশী বড় হয়ে গেলে রোগীর হঠাত মৃত্যুও ঘটতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত একজন নিউরোমেডিসিন বা নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সেই মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
মানব দেহের জন্য টিউমার একটি মরণব্যাধি রোগ তাই যদি শরীরে টিউমারের লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাহলে আমাদের সকলের উচিত অতি দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সেই মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করা। অন্যথায় এর কারণে আমাদের মৃত্যু হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে টিউমার চেনার উপায়, টিউমারের বিভিন্ন লক্ষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি টিউমারের ভয়াবহতা ও এর লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন তথ্য বা মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url