আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
বিবাহিত দম্পতির জীবনে সন্তানের আগমন বিশেষ এক খুশির সংবাদ নিয়ে আসে। প্রত্যেক দম্পতিরই একটা সন্তানের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা, মায়া কাজ করে। আর যখন কোনো দম্পতি জানতে পারে যে তার একটা সন্তানের বাবা-মা হতে চলেছে তখন সেই সন্তানকে নিয়ে নানা ধরণের কৌতহলের উদয় হয়। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
সেইসাথে আর্টিকেলটিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বোঝার উপায়, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে কত সপ্তাহে ছেলে না মেয়ে বোঝা যায়, আল্ট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্ট কি ভুল হয় বা হতে পারে তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বোঝার উপায়
কোনো নারীর গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভের সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভে থাকা সন্তানের অবস্থা, শারীরিক গঠন, লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকা সন্তানের স্বাস্থের খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরও পড়ুন ঃঃ মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার ২০ টি উপায়
আমরা অনেকেই আছি যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে পারি না। যদিওবা ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভের সন্তানের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আমাদেরকে জানিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরেও আমাদের মনের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট টা নিজে নিজেই বুঝার কৌতুহল জাগে। আপনারা যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তারা নিচে দেওয়া নিয়মগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করুন। তাহলে আপনি নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারবেন।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে হলে আপনাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এর কিছু তথ্য দ্বারা কি বুঝানো হয়ে তা জানতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা থাকে-
- Fetal Number: এই নাম্বার দ্বারা গর্ভে থাকা ভ্রুনের সংখ্যা নির্দেশ করা হয়। অর্থাৎ গর্ভে একটি সন্তান আছে নাকি দুইটি বা যমজ সন্তান আছে তা জানতে পাওয়া যায়।
- Fetal Position: আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এর এই অংশটি গর্ভে থাকা ভ্রুনের অবস্থান নির্দেশ করে থাকে।
- Fetal Heart Rate: আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এর এই অংশে থাকা সংখ্যার দ্বারা প্রতি মিনিটে ভ্রুনের অর্থাৎ গর্ভের সন্তানের হৃদস্পন্দন কত তা জানা যায়।
- Amniotic Fluid Index: এর দ্বারা গর্ভের তরল এর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই তরল যেখানে ভ্রুন ভাসমান অবস্থায় থাকবে। গর্ভের তরল এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো 5cm থেকে 25cm এর মধ্যে।
- Placenta: গর্ভে থাকা শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। শিশুর শরীরের রক্ত থেকে বর্জ পদার্থ বের করতেও এই অংশটি সাহায্য করে থাকে। গর্ভের এই অঙ্গটি জরায়ুতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অঙ্গটি পরবর্তীতে শিশুর নাভির উদ্ভভ করে থাকে।
- Fetal Anatomic Survey: আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এর এই অংশের দ্বারা ভ্রুণের অর্থাৎ গর্ভে বেড়ে উঠা সন্তানের শরীরে হার্ট, কিডনি, পাকস্থলি স্পাইন ইত্যাদি সঠিকভাবে তোইরি হয়েছে কিনা তা জানতে পারা যায়।
- Gestational Age(GA): GA এর দ্বারা কতদিন যাবত গর্ভধারণ করা হয়েছে তা জানা যায়। মূলত গর্ভধারণকারীর শেষ মাসিক এর প্রথম দিন থেকে হিসাব শুরু করা হয়ে থাকে।
- Bipariental Diameter(BPD): BPD দ্বারা ভ্রুণের অর্থাৎ গর্ভের সন্তানের ব্যাস নির্দেশ করা হয়।
- Head Circumference(HC): HC দ্বারা গর্ভের সন্তানের মাথার পরিধি নির্দেশ করা হয়।
- Abdominal Circumference(AC): AC দ্বারা সন্তানের পেটের পরিধি নির্দেশ করা হয়।
- Fermur Length(FL): FL দ্বারা গর্ভের সন্তানের বর্তমানের মোট দৈর্ঘ্য জানতে পারা যায়।
উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যেকোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখিত থাকে। তবে হাসপাতাল ও চিকিৎসার ধরণ অনুযায়ী এই রিপোর্টে অতিরিক্ত কিছু তথ্য যুক্ত হতে পারে। যেকোনো রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দিয়ে দেখিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
কত সপ্তাহে ছেলে না মেয়ে বোঝা যায়
গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে তা জানার জন্য সন্তানের হবু পিতা-মাতা সহ পরিবারের অন্যরাও উৎসুক হয়ে থাকে। পূর্বে অর্থাৎ আলট্রাসাউন্ড এর আবিষ্কার হওয়ার আগে পরিবারের দাদি-নানিরা গর্ভবতী মায়ের নাভি দেখে সন্তান বুঝার চেষ্টা করতেন। যদিওবা এসব উপায়সমূহের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বর্তমানে আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি আসার পর গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা খুব সহজেই জানতে পারা যায়। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত গর্ভের সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে হবে তা জানতে পাওয়া যায় না। কত সপ্তাহে ছেলে না মেয়ে তা জানার জন্য গর্ভাবস্থার ২০ থেকে ২২ সপ্তাহ পর আলট্রাসনোগ্রাফি করালে ছেলে না মেয়ে বোঝা যায়।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট
যখন কোনো বিবাহিত দম্পতি সন্তানের জন্ম দেন তখন তাদের মধ্যে ও তাদের পরিবারের মধ্যে সন্তানটিকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। স্বাভাবিকভাবে একটি শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে কোনোভাবেই গর্ভের সন্তানের সম্পর্কে কোনোরুপ তথ্য জানা অসম্ভব। তবে আলট্রাসনোগ্রাম প্রযুক্তির ব্যাবহারে গর্ভের সন্তান সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের তথ্য পাওয়া সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকা সন্তান সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আলট্রাসনোগ্রাম হলো শব্দ তরঙ্গ ভিত্তিক ইমেজিং প্রযুক্তি। এটি মূলত শব্দ তরঙ্গ ব্যাবহার করে দেহের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার-আকৃতি ও অবস্থান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার বিভিন্ন তথ্য জানতে পারা যায়। উদাহরণস্বরুপ গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ অতিক্রম করার পর আল্ট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ জানতে পারা যায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট গর্ভের বাচ্চার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, গর্ভের তরল পদার্থের পরিমাণ, বাচ্চার মাথার ব্যাস, ভ্রুণের সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার খেয়াল রাখার জন্য গর্ভকালীন সময়ে তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিচে গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কখন করা উচিত তা উল্লেখ করা হলোঃ
- ১ম আলট্রাসনোগ্রাফিঃ সাধারণত ১০ থেকে ১৪ তম সপ্তাহে এই আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
- ২য় আলট্রাসনোগ্রাফিঃ গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহে এই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে বলা হয়।
- ৩য় আলট্রাসনোগ্রাফিঃ ৩৬ থেকে ৩৮ তম সপ্তাহে এসে ডাক্তাররা তৃতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
গর্ভধারণের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বিঝতে পারা যায়। আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়বস্তু বিবেচনা করার মাধ্যমে গর্ভে থাকা সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে নিচের বিষয়বস্তু গুলা অনুসরণ করুন-
রক্তচাপঃ গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে তা সম্পর্কে জানতে পাওয়া যায়। চীনের লুইয়াং শহরে ৭ বছর যাবত গর্ভবতী নারীদের উপর গবেষণা করে জানা যায় যে গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ 140 BPM এর কম থাকলে মেয়ে সন্তান হয় এবং রক্তচাপ বেশী থাকলে ছেলে সন্তান হয়।
ভ্রুণের হার্টবিটঃ আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভের ভ্রুণের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১৪০ বারের বেশী হলে মেয়ে সন্তান হয় পক্ষান্তরে কম হলে ছেলে সন্তান হয়।
আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের চিহ্নঃ গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ নির্দেশ করার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সাংকেতিক চিহ্নের ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। যা দ্বারা গর্ভের বাচ্চাটি ছেলে নাকি মেয়ে তা প্রকাশ পায়। ছেলে নাকি মেয়ে তা প্রকাশ করার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে যে চিহ্ন ব্যাবহার করা হয় তা জানতে নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।
XX-XY: অনেক সময় XX ও XY এর দ্বারাও গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ নির্দেশ করা হয়। গর্ভের বাচ্চাটি যদি মেয়ে হয় সেক্ষেত্রে "XX" ব্যাবহার করা হয়। গর্ভের বাচ্চাটি যদি ছেলে হয় তাহলে "XY" দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট কি ভুল হয়
গর্ভে বাড়তে থাকা শিশুর শারীরিক গঠন, অবস্থান, আকার-আকৃতি সহ আরও বিভিন্ন ধরণের তথ্যাদি সম্পর্কে জানতে গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে অনেক সময় গর্ভে শিশুর অবস্থান অথবা আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর সময়ের কারণে আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট ভুল আসে।
উদাহরণস্বরুপ, গর্ভাবস্থার ১০ থেকে ১৪ তম সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর মাধ্যমে ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ বের করার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট কি ভুল হয় তা আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। কারণ এই সময় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ভুল তথ্য প্রদান করতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টের উপর শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না।
লেখকের মন্তব্য
পরিবারে শিশুর জন্ম হওয়া অনেক খুশি ও আনন্দ বয়ে আনে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করার মাধ্যমে শিশুর সুস্বাস্থ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া শিশুর জন্মের পর শিশুর যত্ন নেওয়ার সময়েও অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আর্টিকেলটিতে গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা মতামত জানতে বা জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকেও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url