গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
সন্তানের পিতা-মাতা হওয়াটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতি। তাই আমরা গর্ভবতী মা ও শিশুকে নিয়ে একটু বেশীই যত্নবান হয়ে উঠি। গর্ভকালীন সময়ে সুষম খাদ্যের তালিকায় বিভিন্ন ধরণের শাক সবজির নাম থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু শাক সবজি আছে যেগুলো খাওয়ার ফলে গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে গর্ভাবস্থায় যেসকল শাক সবজি খেলে সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় কি কি শাক সবজি খাওয়া যাবে না তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আর্টিকেলটিতে গর্ভাবস্থায় শাক সবজি খাওয়ার উপকারিতা ও বহুল আলোচিত গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ ও গর্ভকালীন ঝুকি কমাতে শাক খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গর্ভকালীন সময়ে নয় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের শাক অন্তর্ভুক্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শাকে থাকা বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তদ্রুপ ভাবে গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে বিভিন্ন ধরণের গাড় সবুজ পাতাযুক্ত শাকে থাকা ক্যালসিয়াম শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিশুর শরীরে হাড়ে ও ত্বকের বিকাশ ও দৃষ্টি শক্তি তৈরির জন্য ভিটামিন এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আর এই ভিটামিন এ এর উৎকৃষ্ট উৎস হলো বিভিন্ন ধরণের সবুজ শাক সবজি। তাই গর্ভাবস্থায় শাক সবজি খাওয়ার মাধ্যমে শিশুর ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
গর্ভের শিশুর জন্য ফলিক এসিড একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিডের প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন গাড় সবুজ পাতাযুক্ত শাক, কমলালেবুর রস, শিম, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফলিক এসিডের অনেকটা পূরণ করা সম্ভব। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে না
গর্ভে থাকা সন্তানটি যেন সুস্থ সুন্দরভাবে জন্মগ্রহন করতে পারে সেজন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি। গর্ভে থাকা সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আমাদের খাদ্যাভাসেও বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন করে থাকি। গর্ভবতী মা ও সন্তানের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা লক্ষ্যে আমরা গর্ভকালীন সময়ে নতুন সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি কর থাকি।
এই খাদ্য তালিকায় অনেক খাদ্য যোগ করার পাশাপাশি কিছু কিছু খাবার বাদ দিয়ে থাকি। কারণ গর্ভকালীন এসকল খাবার খাওয়ার ফলে গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই গর্ভে থাকা সন্তানের কথা বিবেচনা করে এই খাদ্য তালিকা থেকে কিছু শাক বাদ দেওয়া হয়। নিচে গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে না তা উল্লখ করা হলোঃ
- করলা
- কাঁচা পেপে
- অঙ্কুরিত বীজ
- কাঁচা মূলা
- শিম
- সজিনা
- অ্যালোভেরা
- বেগুন
গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি
স্বাদে তেতো হলেও করলা খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। করলায় থাকা বিশেষ উপাদান আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। সেইসাথে বিভিন্ন রোগ জীবানুর সাথে লড়াই করে শরীরকে রক্ষা করতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যান্য শাক সবজির মতো করে গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে।
স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য সময়ে করলা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী শাক হলেও গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার ফলে করলায় থাকা গ্লাইকোলাইসিস, মারোডিসিন ও সেপোনিক নামক পদার্ধ গর্ভবতী নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার ফলসরূপ গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে করলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজি খাওয়ার অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা ক্ষেত্রে সবজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরণের সবুজ সবজিতে থাকা ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও ফলিক এসিড বিদ্যমান থাকে। যা গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
তবে গর্ভকালীন সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ কিছু কিছু সবজি যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না। তবে আমরা অনেকেই আছি যারা এসকল সবজি সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছুই জানি না। সেই থেকেই আমাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এই প্রশ্নের উদয় হয়।
গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা থেকে করলা, কাঁচা পেপে, অঙ্কুরিত বীজ, কাঁচা মূলা, শিম, সজিনা, অ্যালোভেরা, বেগুন এই সবজি গুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ গর্ভাবস্থায় এসকল সবজিগুলো খাওয়ার ফলে এগুলোতে থাকা বিশেষ উপাদান মায়ের শরীরে বিভিন্ন ধরণের উপসর্গের সৃষ্টি করে থাকে। মনে রাখবেন এসব সবজি খাওয়ার ফলসরূপ আপনার গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
লেখকের পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় শাক সবজি খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু সংখ্যক শাক সবজি আছে যেগুলো এই সময়ে খাওয়ার ফলে এর অপকারিতা দেখা দেয়। তাই আমাদের সকলের উচিত গর্ভবস্থায় এই সমস্ত শাক সবজি গুলো এড়িয়ে চলা। ভুলবশত এসকল সবজি খেয়ে ফেললে এবং এর ফলে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্ট হয় তাহলে দ্রুততার সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি গর্ভবস্থায় শাক খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি না সহ গর্ভাবস্থায় কি কি শাক সবজি খাওয়া যাবে না তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা মতামত জানতে বা জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। গর্ভবতী মা এর বিশেষ যত্ন নেওয়ার উপায়সমূহ সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url