গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ - প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
সন্তানের পিতা-মাতা হওয়াটা এক অন্যরকম সুখের অনুভূতি। যখন কোনো নারী গর্ভধারণ করে তখন তার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মাসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক এসব লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আমাদের সকলকেই সচেতন থাকা উচিত। অনেকেই আছেন যারা এসকল লক্ষণগুলোর সঠিক কারণ না জেনে আতঙ্কিত হয়ে যাই।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্বন্ধে জানার জন্য আপনি সঠিক যায়গাতেই এসেছেন। কারণ এই আর্টিকেলটিতে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়, পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ ও গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
প্রথমবার গর্ভধারণ করার সময় এই বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক দম্পতিই একটু বেশীই চিন্তিত থাকেন। বিয়ের পর থেকেই প্রত্যেক নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তারপরে নারী প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার সময় তার শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ এর পরিবর্তন দেখা যায়। নারীর প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো একটু বেশীই দৃষ্টি গোচর হয়ে থাকে।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার সময় নারীর শরীরে যেসকল লক্ষণ বা পরিবর্তন গুলো হয় সেগুলো অতি সহজেই বুঝতে পারা যায়। শতকরা ৮০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার সময় নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হয়ে থাকেঃ
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া
- স্তনে ব্যাথা অনুভূত হওয়া
- মর্নিং সিকনেস দেখা দেওয়া
- খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আসা
- মুড সুইং হওয়া
- হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন হওয়া
- জ্বর হওয়া
- স্তনে ভারী ভাব অনুভূত হওয়া
- শারীরিক দূর্বলতা
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
যখন কোনো নারী গর্ভধারণ করে অর্থাৎ সে যখন বুঝতে পারে যে সে একটি সন্তানের মা হতে চলেছে এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর হতে পারে না। এ সময় নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এজন্য এই বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য নারীর শরীরে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় তা নিয়ে অনেকেই খুজে থাকেন।
মূলত নারীর শরীরে গর্ভবতী মা হওয়ার লক্ষণ গুলো ১ম সপ্তাহ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। নারীর শরীরের গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করলেই কত দিন পর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বোঝা যায় তা আপনি নিনেই উপলব্ধি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে খুব সচেতন থাকতে হবে তা নাহলে আপনি এসকল লক্ষণ গুলো বুঝতে পারবেন না। আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু পড়ার অনুরোধ করা হলো।
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভধারণের ১ম সপ্তাহের থেকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো দৃষ্টিগোচর হওয়া শুরু করে। প্রায় ৮০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে তাদের গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের মধ্যে এসকল লক্ষণ গুলো দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই লক্ষণ গুলো খুবই নগন্য তাই খুব সহজে এগুলো বুঝতে পারা যায় না। নিচে গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১. মর্নিং সিকনেসঃ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর শরীরে ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। গর্ভধারণের শুরুর দিকে এই সমস্যা তথা লক্ষণটি দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃঃ গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা
আরও পড়ুনঃঃ গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা
২. বমি বমি ভাবঃ বেশীরভাগ সময়ই বমি বমি ভাব হওয়া গর্ভধারণের প্রথম দিকের অর্থাৎ গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলোর মধ্যেকার সবচেয়ে লক্ষনীয় একটি বিষয়। যখন কোনো নারী গর্ভধারণ করে তখন তার শরীরে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনোর স্তর অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তাই এই সময়ে দিনের যেকোনো সময়েই বমি হতে পারে।
৩. স্তনে ব্যাথাঃ গর্ভধারণের ১ম সপ্তাহে বা এর পরে স্তনে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভূত হয়। এই সময়ে স্তনের আকার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। হঠাৎ স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
৪. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জঃ গর্ভধারণের ১ম সপ্তাহের লক্ষণ গুলোর মধ্যে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জও অন্তর্ভুক্ত। তবে অন্য কোনো সংক্রমণের কারণেও এটি হতে পারে। অধিকাংশ সময়ে গর্ভধারণ করার ফলে হরমোনের প্রভাবে এটি হয়ে থাকে।
৫. রুচির পরিবর্তনঃ যখন কোনো নারী গর্ভধারণ করে তখন তার শরীরে বিভিন্ন ধরণের হরমোনার পরিবর্তন দেখা দিয়ে থাকে। তাই তার মধ্যে খাবারের প্রতি রুচির পরিবর্তন দেখা দিয়ে থাকে। এসময় দেখা যায় যে অনেক প্রিয় খাবারের প্রতিও অরুচি দেখা দিয়েছে। আবার বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন খাবার খাওয়ার আগ্রহ দেখা দিচ্ছে। গর্ভাবস্থায় ১ম সপ্তাহে খাবারের প্রতি এরকম রুচির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে একজন নারীর শরীরে যেসকল শারীরিক পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করা যায় সেই সকল লক্ষণ গুলো তার পিরিয়ডের সময়ে যেসকল লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তার সাথে অনেকাংশে মিলে যায়। তাই অনেকে এই পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ গুলোকে আলাদা করে বুঝতে পারে না।
তবে পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ গুলোর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও একটু সচেতনতা অবলম্বন করার মাধ্যমে অর্থাৎ আপনি যদি সহবাসের পরবর্তী সময় থেকেই এসকল লক্ষণ গুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে কোনটি পিরিয়ডের লক্ষণ আর কোনটি গর্ভাবস্থার লক্ষণ।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আশা করছি আপনি নিজেই পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ গুলোকে আলাদা করতে পারবেন। কারণ এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়, গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ ও গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো খুবই সাধারণ হয়ে থাকে। তবে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো অতি সাধারণ হলেও এই সময়ের লক্ষণ গুলো গর্ভকালীন সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যেসকল লক্ষণ গুলো নারীর শরীরে প্রকাশ পায় তার দ্বারাই একজন নারী গর্ভবতী হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া সকল নারীর ক্ষেত্রেই গর্ভবতি হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো প্রায় একই হয়ে থাকে। তাই গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো খুব সহজেই বুঝতে পারা যায়। নিম্নে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- ক্লান্তি বা শারীরিক দূর্বলতা
- ক্ষুধামন্দা
- বমি বমি ভাব
- বুক জ্বালাপোড়া করা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মর্নিং সিকনেস
- মুড সুইং
- সাদা স্রাব
- ঘন ঘন প্রসাব
- হালকা পেটব্যাথা
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে একজন নারীর শরীরে প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণ গুলো পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা নিশ্চিত হতে পারবেন। আর যখন আপনি আপনার এসকল শারীরিক পরিবর্তন গুলো দেখতে পাবেন তখন নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক এ গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন।
লেখকের পরামর্শ
একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষোন গুলো তার শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন ও লক্ষণ এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে। এজন্য আপনি নিজে থেকেই যদি এসব লক্ষণ গুলোর দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে আপনি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বুঝতে পারবেন। আর এই আর্টিকেলটিতে এসব লক্ষণ গুলো সম্পর্কেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের ও প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। যেহেতু আর্টিকেলটিতে পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে তাই আশা করছি আপনি এই দুটি বিষয়ের লক্ষণ গুলোকেও আলাদা করতে পেরেছেন। আর গর্ভবতী হওয়ার এসব লক্ষণ গুলো কত দিন পর বোঝা যায় এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটটিতে গর্ভবতী মা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল রয়েছে, চাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। আশা করছি এতে আপনি উপকৃত হবেন। আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা মতামত জানতে বা জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিত ব্যাক্তিদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url