বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - বেসনের ফেসপ্যাক
ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেকেই অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও দামি দামি কসমেটিক্স সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সামান্য কিছু টাকা খরচ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বকের সর্বোচ্চ যত্ন নিশ্চিত করতে পারবেন। ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলোই ব্যবহার করা সর্বোত্তম।
সেরকমই একটা প্রাকৃতিক উপাদান হল বেসন। কিন্তু অনেকেই এই বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় বা বেসন দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করতে হয় তা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না। এই আর্টিকেলটিতে বেসন দিয়ে রূপচর্চা অর্থাৎ মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম, বেসনের ফেসপ্যাক, বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক এবং মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আর্টিকেলটিতে মুখে বেসন মাখার অপকারিতা সম্পর্কেও বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বেসনের ফেসপ্যাক
ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বেসনের ফেসপ্যাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ব্রণ, র্যাসেজ ইত্যাদি দূর করার ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করে থাকে। ত্বকের উপর থেকে ময়লা দূর করার ক্ষেত্রে বেসনের ফেসপ্যাক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে থাকে।
সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের ফেসপ্যাক বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের ন্যাচারাল তেল নিঃসরণকে এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এতে করে আমাদের ত্বক তেলমুক্ত থাকে। বেশীক্ষণ ধরে রোদে কাজ করার ফলে আমাদের ত্বকের উপরিভাগের কোষগুলো মৃত হয়ে যায়। ত্বকের এই মৃত কোষকে সরানোর কাজে বেসনের ফেসপ্যাক দ্রুতার সাথে কাজ করে থাকে।
ত্বকের আর্দতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বেসনের তৈরি ফেসপ্যাক ব্যাবহার করার জুড়ি নেই। বেসনের ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে বা ত্বকে ব্যাবহার করলে এটি আপনার ত্বকের আর্দতা ধরে রাখার জন্য সাহায্য করবে। সর্বোপরি আমাদের ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে দামি দামি প্রসাধনীর চাইতে প্রাকৃতিক উপায়ে বেসনের ফেসপ্যাক ব্যাবহার করা অনেক উপকারী।
বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক
বেসনের ব্যাবহার করে রূপচর্চা করাটা খুবই সাধারণ একটা পদ্ধতি হলেও আমাদের ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন উপায়ে বেসন ত্বকের যত্নে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে থেকে ত্বকে ব্যাবহার করার জন্য বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক বানিয়ে অনেকেই ব্যাবহার করে থাকেন।
বেসন ও মধুর দ্বারা তৈরি ফেসপ্যাক টি বাজারে যেসব রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা কসমেটিকস সামগ্রী পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক ভালো ও নিরাপদ। কারণ মধু ও বেসনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ, যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
খুব সহজেই বাড়িতেই বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক বানিয়ে নেওয়া যায়। বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক বানানোর জন্য প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে ২ চামচ বেসন ও ২ চামচ মধু (পরিমাণ মতো) নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ফেসপ্যাকটি বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি বেশী পাতলা না হয়ে যায় অর্থাৎ পরিমাণ মতো মধু নিয়ে ঘন করে মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে।
তৈরিকৃত ফেসপ্যাকটি ব্যাবহারের পূর্বে ভালোভাবে মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর বেসন ও মধুর ফেসপ্যাকটি মুখে লাগাতে হবে। এরপর ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর যখন ফেসপ্যাকটি শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যাবহারের ফলে আপনার মুখের রোদে পোড়া কালোভাব, ব্রণের দাগ ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে এবং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
রান্নার কাজে বেসনের ব্যাবহার সেই আদিযুগ থেকে প্রচলিত হয়ে আসলেও আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও এই বেসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কাজেই চাইলে আপনিও বেসন দিয়ে ফর্সা বা ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। ত্বকের যত্নে বিভিন্ন উপায়ে বেসন ব্যাবহার করা যায়। আর্টিকেলের এই অংশে বেসন দিয়ে রুপচর্চা করার বা ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
বেসন ও কাঁচা দুধের ফেসস্ক্রাবঃ বেসনের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করার মাধ্যমে স্বাস্থউজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব। এজন্য একটি পাত্রে বেসন ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিতে হবে। এরপর মুখ পরিষ্কার করে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বেসন ও মধুর ফেসপ্যাকঃ বেসন ও মধু দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বকে ব্যাবহার করা যায়। এজন্য ২ চামচ বেসনের সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে ঘন করে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বেসন ও লেবুর রসঃ বেসন ও লেবুর রসের সংমিশ্রণে যে ফেসস্ক্রাবটি তৈরি করা হয় তা আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। কারণ লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের ব্রণের সাথে লড়াই করে। সেইসাথে বেসন আমাদের ত্বকের আর্দতা ধরে রেখে ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে থাকে। বেসন ও লেবুর রসের ফেসস্ক্রাব সপ্তাহে ২ বার করে নিয়মিতভাবে ব্যাবহারের পর আপনি নিজেই এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন। বেসন ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি করা এই ফেসস্ক্রাবটি ৫-৭ মিনিটের বেশী মুখে লাগিয়ে রাখা ঠিক না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
বেসন ও গোলাপ জলঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে এনে ত্বককে লাবণ্যময়ী করে তোলার ক্ষেত্রে বেসন ও গোলাপ জল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে এই অন্যতম। একটি পাত্রে ২ চামচ বেসনের সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিয়ে পানি পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে ২ বার করে এই নিয়মে ব্যাবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
বেসন ও শসার স্ক্রাবঃ একটি শসাকে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এতে ১ চামচ পরিমাণ বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তা মুখ ও ঘাড়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। হারিয়ে যাওয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়ার জন্য এই ফেসস্ক্রাবটি সপ্তাহে দুইবার ব্যাবহার করুন।
বেসন দিয়ে রুপচর্চা
রান্নার কাজে বেসনের ব্যাবহার করা হয় এটি আমাদের সকলেরই জানা। রান্নার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও এই বেসনের ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। বেসন দিয়ে রুপচর্চা করা যায় তা কমবেশী সবারই জানা থাকলেও কি উপায়ে এটি ব্যাবহার করা করতে হয় তা অনেকেরই অজানা।
বেসন দিয়ে রুপচর্চা করার জন্য এটি ব্যাবহার করে ফেসপ্যাক ও ফেসস্ক্রাব তৈরি করে ব্যাবহার করতে পারেন। বেসন এর সাথে মধু, গোলাপজল, লেবুর রস, কাঁচা দুধ, শসা ইত্যাদি ব্যাবহার করে মিশ্রণ তৈরি করে তা আপনার ত্বকে ব্যাবহার করতে পারবেন। বেসন দিয়ে রুপচর্চা করার উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
মুখে বেসন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে ব্যাবহার করলে আপনি এর সর্বোতকৃষ্ট ফলাফল পাবেন। মুখে বেসন ব্যাবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। বেসন ত্বকের যত্নে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপাদান। মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়মগুলো সহজ এবং ঘরোয়া উপায়ে করা যায়।
প্রথমে এক চামচ বেসনের সাথে একটু হলুদ ও এক চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে ও গলায় মেখে দশ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং মরা চামড়া দূর করে। এছাড়া ত্বক শুষ্ক হলে বেসন ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
মুখে বেসন মাখার অপকারিতা
বেসন ব্যবহার করেছেন এমন অনেকেরই মুখে শোনা যায় যে বেসন ব্যাবহারের ফলে নাকি তাদের ত্বক একটু বেশী শুষ্ক হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে যাদের ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির তাদের মুখে বেসন মাখার অপকারিতা দেখা দিতে পারে। এজন্য যাদের ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির তারা বেসন ব্যাবহার না করাই ভালো। আর আপনি যদি ব্যাবহার করতেই চান তাহলে ৫ মিনিটের বেশী বেসন ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন না।
লেখকের পরামর্শ
সঠিক নিয়ম অনুসারে বেসন ত্বকে ব্যাবহার করলে বেসনের কার্যকারিতা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে বেসন দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়ার যায় তা উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সেই সাথে বেসন এর সাথে অন্যান্য উপাদান সমূহ মিশিয়ে কিভাবে বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে হয় ও মুখে বেসন মাখার অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা মতামত জানতে বা জানাতে নিচে কমেন্ট করুন। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়য়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। আপনার করা প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url